চূড়ান্ত আপিলে খালাস না পেলে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার একাদশ জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেয়ার সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন অ্যাটর্নি জেন...
চূড়ান্ত আপিলে খালাস না পেলে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার একাদশ জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেয়ার সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
রাষ্ট্রের প্রধান এই আইন কর্মকর্তা বলেন, ‘উনি (খালেদা জিয়া) যদি খালাস পেয়ে যান তারপরও তাঁকে ৫ বছর অপেক্ষা করতে হবে।’
মঙ্গলবার (২৭ নভেম্বর) বিকেলে নিজ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন অ্যাটর্নি জেনারেল।
দুই বছরের বেশি সাজাপ্রাপ্ত কোনও আসামি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবে না মর্মে মঙ্গলবার এ আদেশে জানান হাইকোর্ট। এসময় আমানুল্লাহ আমানসহ বিএনপির পাঁচ নেতার করা আবেদন খারিজ করে দেন আদালত।
আদালতের রায় প্রসঙ্গে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘গতকাল অ্যাডভোকেট ফখরুল ইসলাম এবং ওদুদ ভূইয়া, মশিউর রহমান, আব্দুল ওয়াহাব, আমানুল্লাহ আমান ও জাহিদ হোসেন কতগুলো দরখাস্ত করেছিলেন হাইকোর্টে, এই কথা বলে যে, তারা দুর্নীতি দমন কমিশনের দায়েরকৃত মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত হয়ে জামিনে আছেন। তাদের দণ্ড যদি স্থগিত না করা হয় তাহলে তারা সামনে যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে তাতে অংশগ্রহণ করতে পারছেন না। এই কথা বলে তারা তাদের দণ্ড বা কনভিকশন স্থগিতের আবেদন করেছিলেন।’
মাহবুবে আলম আরও বলেন, ‘আমি আদালতে বলেছিলাম, ফৌজদারি আদালত, বিশেষ করে ফৌজদারি আপিল আদালত তাদের সাজা (সেনটেনস) স্থগিত করতে পারেন। কিন্তু কনভিকশন করে তাকে যে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে সেটাকে স্থগিত করার কোনও সুযোগ নেই। আর বিশেষ করে আমি সংবিধানের ৬৬(২)-এর (ঘ) উল্লেখ করে বলেছিলাম, ‘এই সমস্ত ব্যক্তিরা জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পরবেন না বা সংসদ সদস্য হিসেবেও থাকতে পারবেন না।’
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘এমতাবস্থায় যদি তাদের দণ্ড স্থগিত করে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ করে দেয়া হয়- তবে তা হবে সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদের লঙ্ঘন।’
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ক্ষেত্রেও এ আদেশ প্রযোজ্য হবে কি না জানতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘নিশ্চয়ই, এটা তো সাংবিধানিক বিধিবিধান। কেউ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবে না বা সাংসদ হিসেবে তিনি পার্লামেন্টে থাকতে পারবেন না, যদি তিনি নৈতিক স্খলনজনিত কারণে অন্যূন দুই বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন এবং মুক্তিলাভের পরে ৫ বছর অতিবাহিত না হয়।’
অ্যাটর্নি জেনারেল আরও বলেন, ‘এখানে কন্ডিশন মূলত দুটি। তিনি যদি দণ্ডিত হন পারবেন না। ইতোমধ্যে তিনি যদি তার দণ্ড থেকে মুক্তিলাভ করেন বা তার সাজা যদি বাতিল হয়ে যায় সেই ক্ষেত্রে বাতিলের তারিখ থেকে ৫ বছর পর্যন্ত তিনি পারবেন না। মানে দুটো প্রতিবন্ধকতা তার আছে। এর মধ্যে এটা সাংবিধানিক প্রতিবন্ধকতা। কাজেই যেকোনও আদালত তার রায় দিয়ে এই সাংবিধানিক প্রতিবন্ধকতাকে ওভারকাম করতে পারেন না, এটাকে অগ্রাহ্য করতে পারেন না।’
খালেদা জিয়া বা বিএনপির অন্যান্য যেসব নেতা দণ্ডিত সেটা যদি আপিল বিভাগে স্থগিত হয় তবে কি তারা নির্বাচন করতে পারবে- এমন প্রশ্নে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘আপিল বিভাগ কী করবে আমি বলতে পারি না। কিন্তু আমার সাবমিশন হলো সংবিধানের ওপরে।’
অতীতে ১০ বছরের দণ্ড নিয়ে আওয়ামী লীগের মহিউদ্দিন খান আলমগীর ও মোফাজ্জল চৌধুরী মায়ার নির্বাচন করেছেন। এমনকি মন্ত্রীও হয়েছেন। এবং বহাল থেকেছেন। এছাড়া এরশাদও কারাগার থেকে নির্বাচন করে নির্বাচিত হয়েছিলেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাহবুবে আলম বলেন, ‘এরশাদের বিষয়ে তো আমাদের সুপ্রিম কোর্টেরই রায় আছে। তার যে পদ সেটা খারিজ হয়ে গিয়েছিল। আর মহিউদ্দিন খান আলমগীর বা মায়া এদের ব্যাপারে সেই সময় এই সাবমিশনগুলো রাখা হয়েছিল কি না, এটা আমি বলতে পারব না।’
বেগম জিয়া দুই মামলায় ১৭ বছরের কারাদণ্ড ভোগ করছেন। তাহলে কি তাঁকে নির্বাচনে অংশ নিতে আরও ২৩ বছর অপেক্ষা করতে হবে? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘সংবিধান তো তাই বলে। আর উনি যদি খালাস পেয়ে যান তারপরও তাকে ৫ বছর তো অপেক্ষা করতে হবে।’
এ বিষয়ে রাষ্ট্রের বিজ্ঞ আইন কর্মকর্তারা বলছেন, খালেদা জিয়ার সামনে একটা পথই এখন খোলা আছে। সেটা হলো আপিল বিভাগ থেকে যদি তিনি ভোটে অংশ নেওয়ার ব্যাপারে দিকনির্দেশনা পান। কিন্তু সে জন্য খালেদা জিয়ার হাতে সময় খুবই কম। পাশাপাশি এই রায়ের ফলে শুধু খালেদা জিয়াই নন, প্রার্থী হিসেবে অযোগ্য হবেন সব দলের সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা, যাদের সাজা-দণ্ড এখনও স্থগিত হয়নি।