দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর অবশেষে উৎসব মুখর পরিবেশে মঙ্গলবার বিকেলে যশোরের মনিরামপুরে ঝাঁপা বাওড়ের উপর নির্মিত দেশের সর্ববৃহৎ ‘ভাসমান সেতু’র উদ্বোধন করে জনগণের চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে।
যশোরের জেলা প্রশাসক প্রধান অতিথি হিসেবে এ সেতুর উদ্বোধন করেন। এলাকার ৬০ ব্যক্তির অর্থায়নে নির্মিত ভাসমান এ সেতুর উদ্বোধনের ফলে ঝাঁপা বাওড়ের দুপাশের প্রায় ২০ হাজার মানুষের মধ্যে চলাচলের সেতুবন্ধন আরো দৃঢ় হলো। এমনটাই জানা গেছে এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে। এ ছাড়া সেতু উদ্বোধন উপলক্ষে বাওড়ের দুই তীরের মানুষের মধ্যে মিলনমেলায় পরিনত হয়।
ঝাঁপা গ্রাম উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের উদোগে বাওড়ের পশ্চিম প্রান্তে আয়োজন করা হয় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান শামছুল হক মন্টুর সভাপতিত্বে বিকেল চারটা ২০ মিনিটে ফিতে কেটে সেতুর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক আশরাফ উদ্দিন।
বিশেষ অতিথি হিসেব উপস্থিত ছিলেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ ওবায়দুর রহমান, সহকারি কমিশনার(ভূমি) হুসাইন মুহাম্মদ আল মুজাহিদ। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সেতুর উদ্ভাবক মাদ্রাসা শিক্ষক আসাদুজ্জামান।
এক হাজার মিটার দৈর্ঘ্যরে এ সেতুর উদ্বোধন করে জেলা প্রশাসক বলেন, এ ধরনের বিরল সেতু উদ্বোধন করতে পেরে আমি গর্বিত।
এ ছাড়া সেতু নির্মানে স্থানীয় উদ্যোক্তাদের ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি আরো বলেন, এ সেতু আরো উন্নয়নে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করতে সরকারের উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে।
এ দিকে এ সেতু উদ্বোধন উপলক্ষে বাওড়ের দুই তীরে হাজার হাজার নারী-পুরুষের উপস্থিতিতে সেখানে পরিনত হয় মিলন মেলায়। মানুষের মাঝে দেখা দেয় আনন্দের বন্যা।
ঝাঁপা গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক আবদুস সাত্তার আবেগআপ্লুত হয়ে বলেন, ছোট বেলায় প্যান্ট এবং জামা খুলে বই মাথায় নিয়ে সাতরে বাওড়ের ওপারে (পূর্ব প্রান্তে) স্কুলে যেতাম। আজ রিতিমত ভাসমান সেতুর উপর দিয়ে দ্রুততম সময়ে পারাপার হতে পারছি।
ঝাঁপা গ্রাম উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের সভাপতি এবং ভাসমান সেতু নির্মানের উদ্যোক্তা মেহেদী হাসান টুটুল এবং মাদ্রাসা শিক্ষক আসাদুজ্জামান জানান, বছর খানেক আগে বাঁওড় পাড়ে বসে তারা কয়েকজন বন্ধু গল্প করছিলেন। এসময় বাওড়ে মেশিন দিয়ে বালি তোলা হচ্ছিল। সেই মেশিনটি রাখা হয়েছিল প্লাস্টিকের ব্যারেলের ওপর ভাসমান অবস্থায়। এ দৃশ্য দেখে সেতু নির্মানের পরিকল্পনা করেন তারা। এরপর গ্রামবাসীর সাথে বৈঠক এবং তহবিল গঠনের কাজ শুরু করেন ওই বন্ধুরা। গ্রামের মোট ৬০ ব্যক্তির কাছ থেকে প্রায় অর্ধকোটি টাকা নিয়ে তহবিল গঠন করে স্থানীয় লেদ শ্রমিকদের সহায়তায় প্লাষ্টিকের ব্যারেল আর স্টীলের পাত দিয়ে নির্মান করা হয় এক হাজার ফুট দৈর্ঘ্যরে এ ভাসমান সেতু। প্রধান উদ্যোক্তা মাদ্রাসা শিক্ষক আসাদুজ্জামান জানান, এলাকাবাসীর সহযোগীতায় প্রায় এক বছর সময়ের মধ্যে এ সেতু নির্মান করতে পেরে তিনি সহ তার বন্ধুরা(আয়োজক)ধন্য।
0 coment rios: