যশোরে দেড় শতাধিক ইটভাটার মধ্যে বেশির ভাগেরই জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ। অর্ধশতাধিক ভাটা নামমাত্র অনুমতি নিয়ে...
যশোরে দেড় শতাধিক ইটভাটার মধ্যে বেশির ভাগেরই জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ। অর্ধশতাধিক ভাটা নামমাত্র অনুমতি নিয়ে টিনের চিমনি বসিয়ে ইট পোড়াচ্ছে। অনেকে আবাদি জমিতে গড়ে তুলেছে ভাটা। এতে পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি হুমকির মুখে পড়েছে বনভূমি ও কৃষিজমি।
জেলা প্রশাসনের হিসাবে, যশোরে ইটভাটা রয়েছে ১৮০টি। এর মধ্যে সদর উপজেলায় আছে ৪৬, মণিরামপুরে ৩৭, চৌগাছায় তিন, ঝিকরগাছায় ২০, বাঘারপাড়ায় ২১, শার্শায় ২২, অভয়নগরে ১১ ও কেশবপুরে ১০টি। এসব ইটভাটার মধ্যে খুব কমসংখ্যক পরিবেশ অধিদপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী আধুনিক জিগজ্যাগ পদ্ধতিতে ইট পোড়াচ্ছে। অধিকাংশই ফিক্সড চিমনি ব্যবহার করছে। এছাড়া জেলা প্রশাসনের হিসাবের বাইরে অর্ধশতাধিক ইটভাটা রয়েছে, যেগুলোর কোনো অনুমতি নেই। অননুমোদিত এসব ইটভাটায় ৪০-৫০ ফুট উচ্চতার টিনের চিমনি ব্যবহার করা হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কয়লা দিয়ে ইট পোড়ানোর নিয়ম থাকলেও অধিকাংশ ভাটা মালিক তা মানছেন না। প্রায় সব ভাটায় অবাধে পোড়ানো হচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ। বিশেষ করে যশোর অঞ্চলের খেজুর গাছ উজাড় হয়ে যাচ্ছে। তাছাড়া অধিকাংশ ইটভাটা জনবসতির খুবই কাছে এবং ফসলি জমিতে গড়ে উঠেছে।
অথচ পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ভূমি মন্ত্রণালয়ের জারি করা ইট পোড়ানো নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী ইটভাটা অবশ্যই অনুর্বর, অকৃষি, অস্থায়ী পতিত জমিতে স্থাপন করতে হবে। একই সঙ্গে কয়লার পরিবর্তে কাঠ পোড়ানো হলে লাইসেন্স বাতিল করার বিধান রয়েছে। আর পরিবেশ অধিদপ্তরের আইন অনুযায়ী জিগজ্যাগ পদ্ধতিতে ইট পোড়াতে হবে।
অবশ্য যশোরের ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি আবদুল মালেকের দাবি, এখন প্রায় সব ভাটায় কয়লার মাধ্যমে ইট পোড়ানো হয়।
এ ব্যাপারে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড.সাইবুর রহমান মোল্যা বলেন, ইটভাটাগুলোয় সাধারণত কাঁচা কাঠ পোড়ানো হয়। এতে প্রচুর পরিমাণে কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গত হয়। একই সঙ্গে উত্পন্ন হয় ছাই। এ ছাই নিঃশ্বাসের সঙ্গে ফুসফুসে প্রবেশ করে জটিল রোগ সৃষ্টি করতে পারে। তাছাড়া গাছ কেটে ফেলার কারণে অক্সিজেনের উত্স এবং কার্বন ডাই-অক্সাইড পরিশোধনের মাধ্যমও হারিয়ে ফেলছি।
যশোর পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মিজানুর রহমানের দাবি, রুটিন অনুযায়ী প্রতিনিয়ত অভিযান অব্যাহত রয়েছে। অবৈধ ভাটা মালিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। যশোর জেলা প্রশাসক মো. আশরাফ উদ্দিন বলেন, অবৈধ ইটভাটার মালিকদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। সুনির্দিষ্ট তথ্য পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।