স্বর্ণ ও হুন্ডির টাকা পাচারের নিরাপদ রুট হিসেবে পরিণত হয়েছে বেনাপোল সীমান্ত। ভারতে স্বর্ণের দাম বেশি হওয়ায় এ সীমান্ত পথে স্বর্ণ পাচার কর...
স্বর্ণ ও হুন্ডির টাকা পাচারের নিরাপদ রুট হিসেবে পরিণত হয়েছে বেনাপোল সীমান্ত। ভারতে স্বর্ণের দাম বেশি হওয়ায় এ সীমান্ত পথে স্বর্ণ পাচার করছে আন্তর্জাতিক পাচারকারীরা।তাছাড়া,বেনাপোল সীমান্ত থেকে কলকাতার দূরত্ব মাত্র ৮৪ কিলোমিটার। যাতায়াত ব্যবস্থা ভালো হওয়ায় প্রতিদিন এ পথে পাচার হচ্ছে সোনা ও টাকা।
উল্লেখ্য, বেনাপোল সীমান্ত থেকে গত ১০ মাসে প্রায় ৩৫ কেজি স্বর্ণ ও গত দুই মাসে হুন্ডির দেড় কোটি টাকা উদ্ধার করেছে বিজিবি ও কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।
সীমান্তের একটি সূত্র জানায়, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত প্রায় ৩৫ কেজি স্বর্ণ আটক হলেও প্রতিদিন পাসপোর্টধারী যাত্রী এবং চোরাচালানীদের মাধ্যমে কেজি-কেজি সোনা ভারতে পাচার হয়ে যাচ্ছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের চোখ ফাঁকি দিয়ে ঢাকা থেকে চার বার হাত বদল হয়ে স্বর্ণ পাচার হয় ভারতে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও কাস্টম সূত্র জানায়, প্রথমত, ঢাকা থেকে ট্রেন অথবা বাসে করে একটি গ্রুপ স্বর্ণ নিয়ে আসে বেনাপোলে। পরিবহন কাউন্টার অথবা তাদের নির্ধারিত স্থানে স্বর্ণের চালানটি বদল হয় স্থানীয় এজেন্টের হাতে। এরপর স্থানীয় এজেন্টরা সেই স্বর্ণের চালান নিয়ে যায় গাতীপাড়া, দৌলতপুর, পুটখালী, ঘিবা সীমান্তের নির্ধারিত কোনও বাড়িতে। সেখান থেকে সীমান্ত পার হয়ে ভারতীয় এজেন্টের হাতে স্বর্ণ পৌঁছে দেওয়া হয়।
সূত্রটি আরও জানায়, পাচারকারী চক্রের সদস্যরা বিজিবির হাতে আটক এড়াতে নতুন নতুন কৌশলে বেনাপোল বাজার থেকে স্বর্ণ নিয়ে সীমান্তে পৌঁছে দিচ্ছে। এছাড়া, মহিলা পাসপোর্টধারী যাত্রীরা ঢাকা থেকে স্বর্ণ নিয়ে বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে ভারতে চলে যাচ্ছেন।
পাসপোর্টধারী যাত্রীদের মাধ্যমে স্বর্ণ পাচারের সময় ১১ জুলাই নারায়ণগঞ্জের আবু সালামকে (২৭) বেনাপোলের ওপারে ভারতের হরিদাসপুর আইসিপির কাস্টম সদস্যরা আটক করেন।তার কাছ থেকে ২০টি স্বর্ণের বার উদ্ধার করা হয়, যার ওজন ২ কেজি ৩ গ্রাম।
বেনাপোলে স্বর্ণ ও টাকা উদ্ধার ১বাংলাদেশি পাসপোর্টধারী যাত্রী ভারতে স্বর্ণসহ আটকের পর বেনাপোল চেকপোস্টের কাস্টমস কর্তৃপক্ষ নড়েচড়ে বসে। বহির্গমন চেক পয়েন্টের স্ক্যানিং মেশিনটি দ্রুত মেরামত ও চালু করা হয়। পরদিন ১২ জুলাই বেনাপোল কাস্টমস হাউসের শুল্ক গোয়েন্দা সদস্যরা চেকপোস্ট এলাকা থেকে ভারতগামী পাসপোর্টধারী যাত্রী পারভেজকে (২৫) সাতটি স্বর্ণের বিস্কুটসহ আটক করেন। জুতার সোলের ভেতরে লুকিয়ে এই স্বর্ণ পাচার করা হচ্ছিল । এরপর ১৪ জুলাই পাসপোর্টধারী যাত্রী জালাল আহমেদ সেলিমকে (৪৪) পাঁচ পিস স্বর্ণের বিস্কুটসহ আটক করা হয়।
যশোর ৪৯ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল আরিফুল হক জানান, ভারতে সোনার চাহিদা বেশি থাকায় আন্তর্জাতিক সোনা পাচারকারী চক্রের সদস্যরা এখন ভারতে সোনা পাচার করছে।
তিনি আরও জানান, বিভিন্ন দেশ থেকে বিমানপথে স্বর্ণ আসার পর শুল্ক কর্মকর্তাদের নজর এড়িয়ে বেশ কিছু চালান দেশের ভেতরে প্রবেশ করে। পরবর্তীতে সীমান্তের বিভিন্ন বৈধ ও অবৈধপথে ভারতে স্বর্ণ পাচার হচ্ছে।
বেনাপোল কাস্টমস শুল্ক গোয়েন্দা কার্যালয়ের ডেপুটি কমিশনার আব্দুস সাদিক বলেন,‘বিভিন্ন গোয়েন্দা সূত্রে খবর পেয়ে আমরা সোনাসহ পাচারকারীদের আটক করে থাকি। পাশাপাশি আমাদের গোয়েন্দারা সব সময় সজাগ দৃষ্টি রাখেন, যাতে স্বর্ণ পাচার না হয়।’
বেনাপোল পোর্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অপূর্ব হাসান জানান, স্বর্ণ পাচারের কোনও তথ্য আমরা পেলে তাৎক্ষণিক অভিযান চালিয়ে জড়িতদের আটক করি। বেনাপোল পোর্ট থানা বিগত দিনগুলোতে স্বর্ণের বড় বড় চালান আটক করেছে।’