যশোর ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন সিন্ডিকেট কারণে মানুষের দৈনন্দিন খাদ্য দ্রব্য চাল, ডাল, ভোজ্য তেল ও দৈনন্দিন ব্যবহারিক দ্রব্যাদির দাম লাগামহীন ভাবে বেড়ে চলেছে। তার প্রভাব পড়েছে যশোর অঞ্চলে বসবাসকারী নি¤œ মধ্যবিত্ত শ্রমিক শ্রেণীর মানুষের। যশোর অঞ্চলে ৭০% মানুষ কৃষি কাজের উপর নির্ভর।
গত টানা বর্ষনে কৃষকের মাঠে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হওয়া ও বর্তমান বাজারে দ্রব্য মূল্যের উর্ধ্বগতিতে এই অঞ্চলের কৃষক শ্রমজীবি ও অল্প আয়ের মানুষ এখন বেশি বিপদগ্রস্থ। সংসার চালাতে তারা হিমশিম খাচ্ছে। সরকারি ভাবে বাজার মনিটরে শক্তিশালী কোন সেল না থাকায়, বিভিন্ন ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের মাধ্যমে দ্রব্যমূল্য গুদামজাত করে বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে দ্রব্য মূল্যের দাম বাড়িয়ে দেয় বলে অভিযোগ আছে।
সরকার শত চেষ্টা করেও বিভিন্ন সিন্ডিকেট ভাঙতে না পারায় এর প্রভাব পড়ছে দ্রব্য মূল্যের বাজারে। আর তার ভুক্তভোগী হচ্ছে সাধারণ নিন্ম মধ্যবিত্ত ও শ্রমজীবি মানুষ। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন আগে ছোট ছোট চালকল, চাতাল, আড়ৎ এর মাধ্যমে চাল উৎপাদন করে বাজারে সরবরাহ করা হতো। ফলে কোন একক ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর পক্ষে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব ছিল না।
কিন্তু বর্তমানে অটো চালকল বেড়ে যাওয়ায় ও বিভিন্ন বাজার সিন্ডিকেট গড়ে উঠায় দ্রব্য মূল্যের দাম কমানো এবং বাড়ানো একটি গোষ্ঠীর নিকট জিম্মি হয়ে পড়েছে। তারা আরও বলেন, সরকার শক্ত হাতে যদি সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ না করতে পারে তাহলে দ্রব্য মূল্যের দাম কমানো সম্ভব হবে না।
সরকার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে আগামী ৩০ শে অক্টোবরের মধ্যে ব্যবসায়ীদের অবশ্যই খাদ্য মন্ত্রণালয় ও খাদ্য দপ্তর থেকে লাইসেন্স গ্রহণ করতে হবে এবং কোন ব্যবসায়ী ৩০০ মেঃ টন চাল ও গম গোডাউনে সর্বোচ্চ ৩০ দিন মজুদ রাখতে পারবে। এই সময়ের মধ্যে তার পণ্য বিক্রি না হলে ১৫ দিন পর পর স্থানীয় খাদ্য দপ্তরকে জানাতে হবে। যদি সরকার শক্ত হাতে এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে পারে তাহলে চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে আসবে বলে তারা মনে করেন।
সরেজমিন বাজার ঘুরে দেখা যায় গত কিছুদিন চালের দাম সর্বকালে সর্বোচ্চ রেকর্ড ভেঙে ৭০ টাকা দরে বিক্রি হয়, এখন চালের দাম কিছুটা কমলেও এখন সর্বোচ্চ রেকর্ড দামে বিক্রি হচ্ছে। বাসমতি চাল পাইকারি ৬০ টাকা, খুচরা ৬৩ টাকা, সুপার মিনিকেট পাইকারি ৫৩ টাকা, খুচরা ৫৫ টাকা, মোটা চাল পাইকারি ৪০, খুচরা ৪৩ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
যশোরে গত টানা বর্ষনে কৃষকের সবজি ফসলে ব্যাপক ক্ষতিসাধিত হওয়ায় কাঁচা বাজারে যে আগুন লেগেছিল তা এখনো সহনীয় পর্যায়ে আসেনি। বাজার ঘুরে দেখা যায়, কাঁচা ঝাল পাইকারি ১৪০ টাকা, খুচরা ১৬০ টাকা, পিয়াজ পাইকারি ৪০ টাকা, খুচরা ৫০ টাকা, রসুন পাইকারি ৭০ টাকা, খুচরা ১০০ টাকা, বেগুন পাইকারি ৫০ টাকা, খুচরা ৬০ টাকা, সিম পাইকারি ১০০ টাকা, খুচরা ১২০ টাকা, পাতাকপি পাইকারি ৩০ টাকা, খুচরা ৪০ টাকা, আদা পাইকারি ১৫০ টাকা, খুচরা ২০০ টাকা, মূলা ৪০ টাকা, শুকনো ঝাল ২০০ টাকা, কলা ৩৫ টাকা, পটল ৩০ টাকা, টমেটো ৭০ টাকা, শসা ৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
অন্যদিকে ভোজ্য তেলের দাম কেজিতে ৪ টাকা বেড়ে ৮৬ টাকার সয়াবিন ৯০ টাকা, ৮০ টাকার সুপার তেল ২ টাকা বেড়ে ৮২ টাকা, ৭৫ টাকার পাম অয়েল ৩ টাকা বেড়ে ৭৮ টাকা, ১০৫ টাকার মুগ ডাল ২৫ টাকা বেড়ে ১৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
অন্যদিকে সরকারের বিদ্যুৎ ও গ্যাস এর দাম বাড়ানো ঘোষনায় সাধারণ মানুষের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। যেখানে বর্তমান দ্রব্যমূল্যের উচ্চ দামে সংসার চালাতে সাধারণ মানুষ হিমশিম খাচ্ছে, সেখানে আবার যদি গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয় তাহলে সাধারণ নিস্ন মধ্যবিত্ত শ্রমিক শ্রেণীর জীবন ধারণ কঠিন হয়ে পড়বে।
চৌগাছা কাবিলপুর গ্রামের বেসরকারি চাকুরিজীবি মোঃ মাহমুদ আলী বলেন, ১৪০০০ (চৌদ্দ হাজার) টাকার বেতনে বর্তমান বাজারে দ্রব্য মূল্যের যে উর্ধ্বগতি তাতে সংসার চালাতে গিয়ে ধার দেনাগ্রস্থ হয়ে পড়ছি। ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া শেষ করাতে পারবো কিনা চিন্তায় রাতে ঘুম হয় না।
ভ্যান চালক আব্দুল খালেক বলেন, সারাদিন ভ্যান চালিয়ে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা রোজগার করি। চাল ও কাঁচা মালের মূল্য বৃদ্ধিতে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছি। ঠিকমত বাজার ঘাট করতে পারি না। আমাদের দেখার কেউ নাই।
0 coment rios: