সৌদি খেঁজুর চাষে কৃষকদের উৎসাহিত করার উদ্যোগ নিয়েছে যশোর হর্টিকালচার সেন্টার। এ লক্ষ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় এই প্রথম সরাসরি সৌদি আরব থেকে টিস্যু কালচারের মাধ্যমে উৎপাদিত চারা আমদানি এবং পরীক্ষামূলক রোপন করা হয়েছে। সরকারি এ কর্মসুচি সফল হলে অচিরেই এ চাষ কৃষক পর্যায়ে ছড়িয়ে দেয়া হবে বলে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
কৃষকরা জানান, বেশ কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশের মাটিতেই সৌদি আরবের খেঁজুর এবং খেঁজুরগাছের চারা আবাদ হচ্ছে। এরই মধ্যে দেশের অনেকেই ব্যক্তিগতভাবে খেঁজুর বীজ ও চারা এনে সৌদি খেঁজুরের বাগান গড়ে তুলেছেন। তবে সেসব খেঁজুর গাছের চারা মানসম্মত না হওয়ায় সরকারি উদ্যোগে এই প্রথম সরাসরি সৌদি আরব থেকে টিস্যু কালচারে উৎপাদিত চারা এনে খেঁজুরাগান সৃজণ করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কৃষি বিভাগের পুষ্টি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় যশোরের খয়েরতলা হর্টিকালচার সেন্টারে শতাধিক সৌদি খেঁজুর চারা রোপন করা হয়েছে।
কৃষকরা জানান, বাংলাদেশের আবহাওয়া যে খেঁজুর চাষের জন্য উপযোগী, তা দেশী খেঁজুরগাছই প্রমাণ করে। এজন্য সৌদি খেঁজুর গাছের বাগান গড়ে বাড়তি লাভবান হওয়ার আশা তাদের। প্রতিদিন জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে কৃষকরা আসছেন হর্টিকালচার সেন্টারে সৌদি খেঁজুর গাছের বাগান দেখতে।
হর্টিকালচার সেন্টারে সৌদি খেঁজুর গাছ দেখতে আসা কৃষক আমজাদ হোসেন জানান, যশোরের মাটি খেঁজুর চাষের জন্য বিখ্যাত। যুগযুগ ধরে এখানে খেঁজুর গুড় উৎপাদন হয়ে আসছে। ফলে আশা করা যায় এ জেলায় সৌদি খেঁজুর গাছ চাষ সফল হবে। তিনি বলেন, আমরা সৌদি খেঁজুর গাছ সংগ্রহের জন্য হর্টিকালচার কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। তারা আমাদের মাঝে সরবরাহ করবেন বলে জানিয়েছেন।
একই কথা জানান, কৃষক হযরত আলী। তিনি বলেন, ইটের ভাটায় জ্বালানি কাঠ হিসেবে অনেক আগে থেকেই যশোরাঞ্চলের খেঁজুর গাছ ব্যবহার করা হচ্ছে। যে কারণে দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে যশোরের খেঁজুর গাছ ও গুড়। একসময় খেঁজুর গাছ ছাড়া কোন গ্রামই কল্পনা করা যেতোনা। অথচ এখন খেঁজুর গাছ খুজে পাওয়া যায় না। এ অবস্থায় সৌদি খেঁজুর গাছ সৃজনের এ উদ্যোগ যশোরের কৃষকদের জন্য আশার আলো। তিনি বলেন, সহজ শর্তে সৌদি খেঁজুর চারা কৃষক পর্যায়ে ছড়িয়ে দিলে কৃষক অনেক লাভবান হবেন।
পুষ্টি চাহিদাপূরণ ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের কথা ভেবে সরকারি উদ্যোগে সৌদি খেঁজুর গাছ সম্প্রসারণে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। অচিরেই এ খেঁজুর চাষ কৃষক পর্যায়ে ছড়িয়ে দেয়া হবে বলে আশা কৃষি বিভাগের।
যশোর খয়েরতলা হর্টিকালচার সেন্টারের উপপরিচালক কৃষিবিদ বিনয় কুমার সাহা বলেন, আমাদের দেশে ব্যক্তি উদ্যোগে বিভিন্ন জেলায় সৌদি খেঁজুর চাষ হয় ঠিক। তবে এসব চারা সৌদি আরব, ভারতসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে সংগ্রহ করা হয়ে থাকে। বিশেষ ব্যবস্থায় আনা এসব খেঁজুর চারা মানসম্মত না হওয়ায় কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে সরকারি উদ্যোগে সরাসরি সৌদি আরব থেকে টিস্যুকালচারে উৎপাদিত চারা এনে বাংলাদেশের প্রত্যেক হর্টিকালচার সেন্টারে সৃজন করা হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় যশোর হর্টিকালচার সেন্টারে সৌদি খেঁজুরের বাগান গড়ে তোলা হয়েছে। তিনি বলেন, খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে এসব সৌদি খেঁজুর চারা কৃষক পর্যায়ে ছড়িয়ে দেয়া হবে। দেশের অর্থনীতি ও কৃষি উন্নয়নে সৌদি খেঁজুর চাষ আগামীতে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে বলে তিনি আশা করেন। তিনি বলেন, সৌদি খেঁজুর চাষে তেমন কোন ঝামেলা নেই। গাছের চারা রোপনের পর জৈব সার প্রয়োগ করলে গাছ সতেজ হয়ে ওঠে। তবে গাছগুলো সব সময় আগাছামুক্ত রাখতে সব সময় বাগান পরিষ্কার রাখা উত্তম।
নিউজ ঃ লোক সমাজ
0 coment rios: