যশোরের কিলার মোখলেছুর রহমান নান্নু ভারতের বনগাঁয় প্রতিপক্ষের হাতে খুন হয়েছে। সংবাদ শুনে স্ত্রী ইতি বেগম গতকাল মঙ্গলবার ভারতে গেছেন। নান্...
যশোরের কিলার মোখলেছুর রহমান নান্নু ভারতের বনগাঁয় প্রতিপক্ষের হাতে খুন হয়েছে। সংবাদ শুনে স্ত্রী ইতি বেগম গতকাল মঙ্গলবার ভারতে গেছেন। নান্নুর পরিবার হত্যার কথা স্বীকার করেছেন। নান্নু যশোর সদর উপজেলার শ্যামনগর গ্রামের সাইফুল ইসলাম সাফু মিয়ার ছেলে। তবে এ ব্যাপারে কোতোয়ালি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) একেএম আজমল হুদা বলেন, উড়ো খবর পাচ্ছি নান্নু ভারতে খুন হয়েছে। অফিসিয়ালি আমাদের কাছে কোনো তথ্য নেই।
নান্নু হত্যাকান্ডের খবর পেয়ে গতকাল মঙ্গলবার সকালে তার বাড়িতে সাংবাদিকরা গেলে তার বড় ভাই শামসুর রহমান মিয়া, পিতা সাইফুল ইসলাম মিয়া ও মাতা জুলেখা বেগম জানান, গত বৃহস্পতিবার নান্নুর সাথে তার স্ত্রীর সর্বশেষ কথা হয়। গত রবিবার সকালে বনগাঁর গোড়াপোতা গ্রামে নান্নুর লাশ পড়ে থাকতে দেখে তার শ্যালক শামীমকে সংবাদ দেয়। শামীম গত সোমবার সকালে তার পরিবারকে জানিয়েছেন। তার মাথা ও বুকে গুলি করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার থেকে নিখোঁজ থাকার পর রবিবার তার লাশ দেখতে পেয়েছে বলে তার স্বজনরা জানান। অপহরণের পর প্রতিপক্ষরা তাকে খুন করেছে বলে পরিবার আশঙ্কা করছে। নান্নুর বিরুদ্ধে যশোর ঝিনাইদহে ২০টি মামলা রয়েছে।
এলাকাবাসী জানান, শীর্ষ সন্ত্রাসী সর্বহারা দলের নেতা সিরিয়াল কিলার হিসেবে পরিচিত মোখলেছুর রহমান নান্নু ভারতে পালিয়ে ছিলেন। সেখানে অপহরণের পর গত ২১ আগস্ট তিনি খুন হয়েছে বলে এলাকায় গুজব ছড়িয়ে পড়েছে। এর আগেও দুই বার খুন হয়েছে বলে এলাকায় প্রচার করা হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে দেখা গেছে সেই খবর ছিল ভুয়া। এবারও সেই রকম নাটক সাজানো হয়েছে কি না সন্দেহ রয়েছে।
এলাকাবাসী জানায়, ১৯৮৬ সালে যশোর শহরের রবীন্দ্রনাথ (আরএন) রোডে একটি আবাসিক হোটেলে বয়ের কাজ করতেন মোখলেছুর রহমান নান্নু। সেখান থেকেই তার অপরাধ জগতে প্রবেশ। এক সময় হোটেল ব্যবসা ছেড়ে মাদক ব্যবসায় নেমে পড়েন নান্নু। আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন হলে অল্প দিনের মধ্যে শ্যামনগরের সর্বহারা দলের নেতা ইউনুস আলী ইনো ও কেরো নজরুলের বাহিনীতে যোগ দেন। শুরু হয় আন্ডারওয়ার্ডে তার যাত্রা। নান্নুর দক্ষতায় সন্তুষ্ট হয়ে সর্বহারা দলের আরেক নেতা শরিফুল তাকে দলে ভেড়ান। দলে কিলার ও সেকেন্ড ইন কমান্ডের দায়িত্ব পান নান্নু। ’৯৭ সালের দিকে পুলিশের হাতে শরিফুল নিহত হলে সেই বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ নেন নান্নু। শরিফুলের নাম মুছে দিয়ে বাহিনীর নাম দেন ‘মিয়া বাহিনী’। এলাকার ছিঁচকে সন্ত্রাসী, মাদকসেবী ও বিক্রেতাদের নতুন সদস্য করেন।
১৯৯৭ সালে ভাড়াটে খুনি হিসেবে আবির্ভূত হন মোখলেছুর রহমান নান্নু। রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব, ক্ষমতার প্রভাব ও ব্যক্তি দ্বন্দ্বের জেরে তাকে হত্যা মিশনে ভাড়ায় ব্যবহার করা হয়। জেলার শীর্ষ নেতাদের আশ্রয়ে বেপরোয়া হয়ে ওঠেন তিনি।
২০১৬ সালের ৩১ সেপ্টেম্বর চৌগাছার পাশাপোল ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কাশেম, ২০১৩ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর চৌগাছার সিংহঝুলি ইউপি চেয়ারম্যান ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি জিল্লুর রহমান মিন্টু, ২০১৪ সালের ২৯ নভেম্বর সদর উপজেলার কাশিমপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সদস্য বাবু, একই সালের ২৯ মার্চ কাঠ ব্যবসায়ী বিএনপি কর্মী ইদ্রিস আলী হত্যা মামলার প্রধান আসামি নান্নু। এছাড়াও আরও বেশ কয়েকটি হত্যাকান্ডে নান্নুর সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ পাওয়া যায়। সেগুলো হলো, ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার বাদুরগাছা গ্রামের গুরুদাস, একই গ্রামের মিন্টু, বারোবাজার আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুর রউফ, সুবর্ণসরা গ্রামের মোমিন, যশোর সদরের মথুরাপুর গ্রামে চকম আলী, ইছালি গ্রামের কোহিনুর, সাজিয়ালি গ্রামের আনিস, হাশিমপুর গ্রামের জয়নাল ও লিটু।