দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম চামড়ার মোকাম যশোরের রাজারহাটে কাঁচা চামড়ার দাম কমে প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। ব্যবসায়ীদের দাবি, ট্যানারি মালিকদের স...
দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম চামড়ার মোকাম যশোরের রাজারহাটে কাঁচা চামড়ার দাম কমে প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। ব্যবসায়ীদের দাবি, ট্যানারি মালিকদের সিন্ডিকেটের কারণেই এ দরপতন। সংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা করছেন, কোরবানির ঈদে স্থানীয় বাজারে আশানুরূপ দাম না মিললে চোরাই পথে ভারতে চামড়া পাচার হয়ে যেতে পারে। ক্ষুদ্র চামড়া ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, তারা ট্যানারি মালিকদের কাছে এক অর্থে জিম্মি হয়ে রয়েছেন। ট্যানারি মালিকদের কাছে এখনো তাদের প্রায় ১০ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে। ঈদের আগেই পাওনা পরিশোধ করা না হলে তারা নতুন করে চামড়া কিনতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন। এদিকে যশোর সীমান্তবর্তী একটি জেলা হওয়ায় এখান থেকে ভারতে চামড়া পাচার করা খুব একটা কঠিন নয়। ফলে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা চামড়া কিনতে না পারলে সেগুলো ভারতে পাচার হয়ে যেতে পারে বলে অনেকের আশঙ্কা। তবে প্রশাসন বলছে, যেকোনো মূল্যে চামড়া পাচার প্রতিহত করা হবে। রাজধানী ঢাকার পর যশোরের রাজারহাটই দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম চামড়ার মোকাম। সপ্তাহে দুদিন শনি ও মঙ্গলবার এখানে হাট বসে। যশোর ছাড়াও আশপাশের জেলাগুলো থেকে ব্যবসায়ীরা চামড়া নিয়ে এ হাটে হাজির হন। রাজারহাটের চামড়া হাটকে কেন্দ্র করে প্রায় ১০ হাজার জনের কর্মসংস্থান হয়েছে। দুই শতাধিক আড়ত রয়েছে এ মোকামে। প্রতি কোরবানির ঈদে রাজারহাটে ১৫-২০ কোটি টাকার চামড়া কেনাবেচা হয়ে থাকে। সম্প্রতি হাট ঘুরে দেখা গেছে, এক মাস আগের তুলনায় সেখানে কাঁচা চামড়ার দাম অর্ধেক কমে গেছে। মাসখানেক আগে যেখানে গরুর ভালো চামড়ার দাম ছিল প্রতি বর্গফুট ১০০-১১০ টাকা, সেখানে এখন বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা দরে। আবার নিম্নমানের চামড়ার দর বর্গফুটপ্রতি ৭০-৭৫ থেকে ৩৫ টাকায় নেমে এসেছে। এদিকে এক মাস আগে ছাগলের চামড়ার দর ছিল প্রতি বর্গফুট ৫০ টাকা। বর্তমানে তা ৩৫ টাকা। চামড়ার এ আকস্মিক দরপতন হতাশায় ডুবিয়েছে সাধারণ ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের। ফলে আসন্ন কোরবানির ঈদে চামড়া কেনা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন তারা। বৃহত্তর যশোর জেলা চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দিন মুকুল বলেন, ট্যানারি মালিকদের কাছে আমাদের কোটি কোটি টাকা পাওনা রয়েছে। এ অবস্থায় সরকার যদি ট্যানারি মালিকদের ঋণ না দেয়, তবে তারা আমাদের গত বছরের চামড়ার টাকা পরিশোধ করবেন না বলে আশঙ্কা করছি। প্রতি বছরই কোরবানির সময় এলে তাদের হাতে টাকা থাকে না। তখন তারা সিন্ডিকেট করে চামড়ার দাম কমিয়ে দেন। এবারো এমনটাই হবে বলে আমাদের ধারণা। তিনি জানান, একদিকে চামড়ার দর কমেছে, অন্যদিকে চামড়া সংরক্ষণের প্রয়োজনীয় লবণের দাম বেড়েছে। বর্তমানে লবণের বস্তা ১ হাজার ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, আগে ছিল ১ হাজার ৫০ টাকা। সমিতির সভাপতি আকিল আহমেদ বলেন, প্রতি বছর কোরবানি এলেই চামড়ার দাম কমে যায়। অন্যদিকে স্থানীয় বাজারের চেয়ে বেশি দাম পাওয়ায় অসাধু ব্যবসায়ীরা বেছে নেয় সীমান্তের চোরাই পথ। এর প্রভাব পড়ে রফতানিযোগ্য খাতটির ওপর। তবে চামড়া পাচার ঠেকাতে প্রশাসন এবার এগিয়ে এসেছে। চামড়া পাচার না হওয়ার ব্যাপারে তারা আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন। স্থানীয় চামড়া ব্যবসায়ী আবদুল মালেক জানান, পেশাদার চামড়া ব্যবসায়ীদের পুঁজি সংকটের সুযোগ নেয় মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। তারা বাজারদরের চেয়ে বেশি দামে পাড়ায় পাড়ায় গিয়ে চামড়া সংগ্রহ করে। কিন্তু পরে বাজারে চাহিদামতো দাম না পেয়ে পাচারকারী চক্রের হাতে চামড়া তুলে দেয়। এ ব্যাপারে যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সিকদার সালাহ উদ্দিন জানান, ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তা দিতে রাজারহাটে পুলিশ ক্যাম্প বসানো হবে। এছাড়া চামড়া যেন কোনোভাবেই পাচার না হয়, তা নিশ্চিত করতে সীমান্তবর্তী থানাগুলোকে সতর্ক দৃষ্টি রাখার নির্দেশ দেয়া আছে।