যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও যশোর-৫ মণিরামপুর থেকে একাধিকবার নির্বাচিত সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট খান টিপু সুলতান ইন্তেকাল করে...
যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও যশোর-৫ মণিরামপুর থেকে একাধিকবার নির্বাচিত সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট খান টিপু সুলতান ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। শনিবার রাত সাড়ে নয়টার দিকে ঢাকার সেন্ট্রাল হসপিটালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। গতকাল সকাল ১১টায় জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণপ্লাজায় প্রথম নামাজে জানাজা শেষে তার মরদেহ যশোর নেয়া হয়। এদিকে প্রিয় নেতার মৃত্যুতে গোটা যশোরে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। প্রিয় মানুষটির শেষ সংবাদ জানতে রাত থেকেই তার যশোর শহরের পুরাতন কসবার ভাড়া বাড়িতে ভিড় করতে থাকেন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা। একই অবস্থা মণিরাপুরেও। রাত থেকে বিভিন্ন এলাকার নেতাকর্মী ও স্বজনরা পৌরসভার পেছনে টিপু সুলতানের বাড়িতে ভিড় করে কান্নাকাটি করতে থাকেন। বিশেষ করে তার দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সহকর্মী ও মুক্তিযোদ্ধারা ভীষণভাবে ভেঙে পড়েছেন। সকাল থেকে শহরের গাড়িখানা রোডের কার্যালয়ে কালোপতাকা উত্তোলন করে চলছে কোরআনখানি। জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদও গ্রহণ করেছে নানা কর্মসূচি। অ্যাডভোকেট খান টিপু সুলতানের মৃত্যুতে যশোরের আদালত প্রাঙ্গণে চলছে ফুল কোর্ট রেফারেন্স। টিপু সুলতানের পুত্র সাদাব হুমায়ুন সুলতান জানান, শনিবার দিনগত রাত সাড়ে নয়টার দিকে ঢাকা সেন্ট্রাল হসপিটালের চিকিৎসকদের নিয়ে গঠিত বোর্ড টিপু সুলতানের লাইফ সাপোর্ট খুলে দেন। এর পর পরই তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়। টিপু সুলতান মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত কারণে গত মঙ্গলবার থেকে রাজধানীর ধানমন্ডি সেন্ট্রাল হসপিটালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। বুধবার থেকে তাকে নিবিড় তত্ত্বাবধানে (সিসিইউ) রাখা হয়। সাদাব জানান, বেলা ১১টায় সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট খান টিপু সুলতানের প্রথম নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয় জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায়। এরপর মরদেহ নেয়া হয় সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে। সেখানে বাদ জোহর জানাজা শেষে তাকে যশোরে নেয়া হয়। বাদ আছর যশোর শহরে জানাজা শেষে মরদেহ নেয়া হবে সংসদীয় এলাকা মণিরামপুরে। সেখানে বাদ মাগরিব জানাজা শেষে জন্মস্থান খুলনার ডুমুরিয়ায় নেয়া হয়। বাদ এশা ডুমুরিয়ায় শেষ দফা জানাজা শেষে তাকে দাফন করা হয়। শেষ জীবনে তিনি স্থায়ীভাবে ঢাকায় বসবাস করতেন। তবে ছুটির দিনগুলোতে আসতেন নির্বাচনী এলাকা মণিরামপুরে। আগামী নির্বাচনে যশোর-৫ আসন থেকে নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন বর্ষীয়ান এই নেতা। এই লক্ষ্যে সমপ্রতি তিনি এলাকায় গণযোগাযোগ বাড়িয়ে দেন। নিয়মিত সভা-সমাবেশ ও গণসংযোগ করছিলেন। এরই মধ্যে গত মঙ্গলবার গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। তাকে রাজধানীর সেন্ট্রাল হসপিটালে ভর্তি করা হয়। সেখানেই শনিবার রাত সাড়ে নয়টার দিকে তিনি মারা যান। খান টিপু সুলতান ১৯৫০ সালের ১৩ই ডিসেম্বর খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার ধামালিয়ায় মামার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তার দাদার বাড়ি নড়াইল সদর উপজেলার চণ্ডীবেড়পুর ইউনিয়নের গোয়ালবাথান গ্রামে। বাবা আব্দুল হামিদ খান তালুক দেখাশুনা করতেন, আর মা আনজীবন আরা বেগম ছিলেন গৃহিণী। দাদা ছিলেন বৃটিশ শাসনামলে যশোর জেলার অনারারি ম্যাজিস্ট্রেট। পরবর্তীতে তিনি পিভি কাউন্সিলের মেম্বার হয়েছিলেন। ছোটবেলায় দাদা-দাদির মৃত্যুর কারণে তার বাবা নানাবাড়ি খুলনার ডুমুরিয়াতে বড় হয়েছিলেন এবং সেখানেই বসতি স্থাপন করেছিলেন। টিপু সুলতান তিন ভাই ও চার বোনের মধ্যে পঞ্চম এবং ভাইদের মধ্যে দ্বিতীয়। ১৯৮২ সালের ১৭ই অক্টোবর খুলনার মেয়ে ডা. জেসমিন আরা বেগমকে বিয়ে করেন টিপু সুলতান। তার স্ত্রী ঢাকা হলি ফ্যামিলি প্রাইভেট মেডিকেল কলেজের গাইনি বিভাগের প্রধান হিসেবে কর্মরত। পারিবারিক জীবনে তারা দুই ছেলে সন্তানের মা বাবা। ১৯৯১ সালে পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হিসেবে যশোর-৫ (মণিরামপুর) থেকে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন খান টিপু সুলতান। এ সময় তিনি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৬ সালের ১২ই জুন সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হিসেবে দ্বিতীয় বারের মতো তিনি যশোর-৫ (মণিরামপুর) আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরে ২০০১ সালে অনুষ্ঠিত অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে ধানের শীষের প্রার্থী মুফতি ওয়াক্কাসের কাছে হেরে যান। ২০০৮ সালের ২৯শে ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে টিপু সুলতান বিজয়ী হয়ে তৃতীয় বারের মতো জাতীয় সংসদ সদস্য হন।
সুত্রঃ মানবজমিন