প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশকে ভালোবাসা, দেশের জন্য ত্যাগ স্বীকার ও ঝুঁকি নেওয়ার সাহস একজন রাজনীতিবিদের জন্য ‘অত্যন্ত গুরুত্...
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশকে ভালোবাসা, দেশের জন্য ত্যাগ স্বীকার ও ঝুঁকি নেওয়ার সাহস একজন রাজনীতিবিদের জন্য ‘অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ’। সে অনুযায়ী নিজেদের গড়ে তুলতে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে বৃহস্পতিবার ছাত্রলীগের আলোচনা সভায় বঙ্গবন্ধুকন্যা এ কথা বলেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক জীবনের কথা স্মরণ করার পাশাপাশি স্বাধীনতা সংগ্রামে বঙ্গবন্ধুর পাশে বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিবের ভূমিকার কথাও অনুষ্ঠানে স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “স্বাধীনতার পেছনে আমার মায়ের অবদান রয়েছে। মা জানতেন বাবা কী চাচ্ছেন। বাবার জন্য আমরা মায়ের ভূমিকা ছিল অনন্য। কখনো দেখিনি ব্যক্তিগত চাওয়া পাওয়া নিয়ে বাবাকে বিরক্ত করতে। বাবা এই দেশের মানুষের জন্য কাজ করছেন- এটা তিনি উপলব্ধি করতেন।”
তিনি বলেন, মানুষের সেবা করাই আওয়ামী লীগের কাজ; এটাই বঙ্গবন্ধুর আদর্শ। এই আদর্শ নিয়েই ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের তৈরি হতে হবে।অতীতে দেশে রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে সহিংসতার প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সব ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে দেশ আজকে এগিয়ে যাচ্ছে। দেশ এগিয়ে যাবে। জাতির পিতার এত ত্যাগ, আমার মায়ের এত ত্যাগ, আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতা-কর্মী যে জেলজুলুম অত্যাচার সহ্য করেছে এবং জনগণের যে আকাঙ্ক্ষা।
“জাতির পিতা তো বলে গেছেন, ‘কেউ দাবায়ে রাখতে পারবা না’। বাংলাদেশের জনগণকে কেউ দাবাতে পারবে না। জাতির পিতা আমাদের মাঝে নাই। কিন্তু তার আদর্শ নিয়েই আমাদের চলতে হবে।
মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের পর নাশকতার বিভিন্ন ঘটনার কথা মনে করিয়ে দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “যারা আমাদের স্বাধীনতা চায়নি, যারা বাঙালি জাতি বিশ্ব সভায় মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হোক তা চায়নি, তাদের ষড়যন্ত্র কিন্তু স্বাধীনতার পরপরই ছিল।
“পাটের গুদামে আগুন দেওয়া, আমাদের আওয়ামী লীগের সাতজন সংসদ সদস্যকে হত্যা করা থেকে শুরু করে থানা লুট করা নানাভাবে… কেউ পূর্ববঙ্গ স্বাধীন করো, কেউ আন্ডারগ্রাউন্ড পার্টি, কেউ অমুক পার্টি, তমুক পার্টি… নানা কিছু করে ব্যতিব্যস্ত করা।”
ছাত্রলীগের স্লোগান ‘শিক্ষা-শান্তি-প্রগতি’র কথা মনে করিয়ে দিয়ে উপস্থিত নেতাকর্মীদের সেই আদর্শে গড়ে ওঠার তাগিদ দেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, “প্রতিটি নেতা-কর্মীকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে। তাহলেই এই দেশকে আমরা গড়ে তুলতে পারব। ভবিষ্যত নেতৃত্বে আসতে হবে। তার জন্য শিক্ষা একান্তভাবে দরকার।
“শান্তি ছাড়া প্রগতি কখনোই আসে না। তাই আমরা সব সময় চাই, আমাদের দেশে একটা শান্তিপূর্ণ পরিবেশ থাকবে। আমরা ধীরে ধীরে প্রগতির পথে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাব।”
যে কোনো দুর্যোগে জনগণের পাশে দাঁড়ানোর মানসিকতা নিয়ে কাজ করার তাগিদ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “যখনই কোনো দুর্যোগ দুর্বিপাক হয়… আমি তখন আওয়ামী লীগসহ সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের উদ্বুদ্ধ করি, সেই দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়ানো, মানুষের সেবা করা।”
জিয়াউর রহমানের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, “যুদ্ধাপরাধী আর স্বাধীনতা বিরোধীদের এনে ক্ষমতায় বসানো। তাদেরকে মন্ত্রী, তাদেরকে উপদেষ্টা করে আমার লাখো শহীদের পতাকা দেওয়া। আর জাতির পিতার হত্যাকারীদের ইনডেমনিটি অডিনেন্স দিয়ে তাদের বিচারের হাত থেকে রেহাই দিয়ে পুরস্কৃত করল বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে। আর যত যুদ্ধাপরাধীর সাজা হয়েছিল, তাদের মুক্ত করে দিল।
বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর বিভিন্ন সরকারের সময়ে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস যেভাবে বিকৃত করা হয়েছে, সে কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বাংলাদেশের কয়েকটা জেনারেশন তো হারিয়েই গেছে। আমাদের বিজয়ের ইতিহাস, আমাদের সংগ্রামের ইতিহাস, মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, সে ইতিহাস জানতেই পারেনি। এটা একটা জাতির জন্যের দুর্ভাগ্যের।”
বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিদের পরবর্তীতে বিভিন্নভাবে মদদ দেওয়া হয়েছিল মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, “জিয়া, এরশাদ, খালেদা জিয়া.. সবাই ওই খুনিদের মদদ দিয়েছে। ভোট চুরি করে পার্লামেন্টে বসিয়েছে। তাদেরকে নানা ভাবে উৎসাহিত করেছে। কেন? আমাকে আঘাত দেওয়ার জন্য। আমি যাতে ভেঙে পড়ি, সেজন্য।
“আমি কোন বাবার মেয়ে, কোন মায়ের মেয়ে এটা তারা উপলব্ধি করতে পারেনি।”