প্রান্তিক মা ও শিশুদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে যশোরে তিনটি হাসপাতাল নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু চিকিত্সক ও অন্যান্য লোকবল নিয়োগ না হওয়া...
প্রান্তিক মা ও শিশুদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে যশোরে তিনটি হাসপাতাল নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু চিকিত্সক ও অন্যান্য লোকবল নিয়োগ না হওয়ায় এগুলো প্রায় তিন বছর ধরে অব্যবহূত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। অথচ ১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ভবনগুলো নির্মাণ করা হয়েছে। প্রতিটি ১০ শয্যাবিশিষ্ট মা ও শিশু স্বাস্থ্যকেন্দ্র তিনটির এমন অবস্থার কারণ জানতে চাইলে সিভিল সার্জনের কার্যালয় থেকে জানানো হয়, চিকিত্সক চেয়ে ২০১৪ সালের ১০ জুন মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হলেও সাড়া পাওয়া যায়নি। অব্যবহূত পড়ে থাকায় ভবনগুলোর কোনো কোনো জায়গায় ফাটল দেখা দিয়েছে। আর রাত হলেই তা চলে যায় মাদকসেবীদের দখলে। চুরি হয়ে যাচ্ছে মূল্যবান যন্ত্রপাতি। যশোর স্বাস্থ্য প্রকৌশল অফিস সূত্রে জানা গেছে, সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২০১২ সালে অভয়নগরের সিঙ্গাড়ি ও শার্শার গোড়পাড়ায় দুটি ১০ শয্যাবিশিষ্ট মা ও শিশু স্বাস্থ্যকেন্দ্রের জন্য ভবন নির্মাণ শুরু হয়। সিঙ্গাড়িতে ৫ কোটি ১৬ লাখ ৫২ হাজার টাকা ও গোড়পাড়ায় ৫ কোটি ৪৭ হাজার ৯১ হাজার টাকা ব্যয়ে দুটি ভবন নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। ভবন দুটি ২০১৪ সালের ১৯ ও ২০ মার্চ যশোর সিভিল সার্জনের কাছে হস্তান্তর করে জেলা স্বাস্থ্য প্রকৌশল দপ্তর। একই নকশায় বেনাপোলের ‘ল্যান্ডপোল মাদার অ্যান্ড চাইল্ড কেয়ার’ হাসপাতাল ভবনটি নির্মাণে ব্যয় হয় ৩ কোটি ২২ লাখ ১৪ হাজার টাকা, যা স্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের কাছে হস্তান্তর করে গত বছরের ৮ অক্টোবর। কিন্তু হাসপাতাল তিনটির একটিও এখনো চালু হয়নি। যশোর শহর থেকে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দূরে শার্শার গোড়পাড়ায় ১০ শয্যাবিশিষ্ট মা ও শিশু স্বাস্থ্যকেন্দ্রটিতে গিয়ে দেখা যায়, শাহাজাহান নামে একজন কর্মচারী হাসপাতাল খুলে বসে আছেন। এখানে দ্বিতল ভবনসহ রয়েছে চিকিত্সকের আবাসন সুবিধা। কিন্তু আর কিছু নেই। ভবনের কিছু জায়গায় ফাটল দেখা দিয়েছে। শাহাজাহান বলেন, আমি ছাড়া এ হাসপাতালের স্থায়ী কোনো জনবল নেই। রাতে কোনো সিকিউরিটি গার্ড না থাকায় ফ্যান ও লাইট চুরি হয়ে গেছে। হাসপাতাল কবে চালু হবে, তা তিনি জানেন না। স্থানীয় ওয়ার্ড মেম্বর হাইম উদ্দিন বলেন, গোড়পাড়া থেকে যশোর শহরে যাওয়ার রাস্তাটার অবস্থা খুব খারাপ। গর্ভবতী মায়েদের যশোরের হাসপাতালে নেয়া ঝুঁকিপূর্ণ। এ হাসপাতাল চালু হলে এলাকার মা ও শিশুদের খুব উপকার হতো। আমরা চালুর জন্য বিভিন্ন সময় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানিয়েছি, কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। আড়াই বছর ধরে ভবনটি এভাবে পড়ে আছে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে যশোর স্বাস্থ্য বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শামসুল আলম বলেন, আমাদের কাজ ভবন নির্মাণ করা। সে কাজ শেষ করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আমরা অনেক আগেই ভবন হস্তান্তর করে দিয়েছি। হাসপাতাল কেন চালু হচ্ছে না— এ প্রশ্নে শার্শা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা অশোক কুমার বলেন, গোড়পাড়া হাসপাতালের জন্য চিকিত্সক না থাকায় পুরোপুরি কার্যক্রম শুরু করা যায়নি। তবে হাসপাতাল চালু না হলেও মাঝে মধ্যে আউটডোরে প্রাথমিক চিকিত্সা দেয়ার চেষ্টা করি। যশোর সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা যায়, জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে ২০১৪ সালের ১০ জুন জনবল চেয়ে মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়। কিন্তু এখনো কোনো জনবল নিয়োগ দেয়া হয়নি। এদিকে দীর্ঘদিন ব্যবহার না হওয়ায় সিঙ্গাড়ি হাসপাতাল চত্বরটি ময়লা আর আগাছায় ভরে গেছে। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বাবুল আক্তার বলেন, হাসপাতালটি ঘিরে স্থানীয়দের অনেক প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু ভবন নির্মাণের পরও দীর্ঘদিন চালু না হওয়ায় তারা হতাশ। যশোর সিভিল সার্জন গোপেন্দ্রনাথ আচার্য বলেন, গোড়পাড়া ও সিঙ্গাড়ি হাসপাতাল পরিদর্শন করেছি। ভবন ছাড়া কোনো আসবাবপত্র নেই। জনবলও শূন্য। প্রয়োজনীয় জনবল ও আসবাব কেনার জন্য বরাদ্দ চেয়ে মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। জেলা প্রশাসনের মাধ্যমেও বিষয়টি সরকারের উচ্চ পর্যায়ে জানানো হয়েছে। তার বেনাপোলের ল্যান্ডপোল মাদার অ্যান্ড চাইল্ড কেয়ার হাসপাতালটি সম্পূর্ণ অরক্ষিত। রাতের বেলা চলে যায় মাদকসেবীদের দখলে। হাসপাতালটি তদারকির দায়িত্ব যশোর পরিবার পরিকল্পনা অফিসের। এ ব্যাপারে যশোর পরিবার পরিকল্পনা অফিসের সহকারী পরিচালক ডা. মুনসী মনোয়ার হোসেন বলেন, জনবল ও আসবাবপত্র চেয়ে একাধিকবার মন্ত্রণালয়ে চিঠি লিখেছি। কাজ হয়নি।