
গতকাল রাজধানীর পান্থপথে আত্মঘাতী বিস্ফোরণে নিহত হন খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার নোয়াকাটি গ্রামের মোল্লা পাড়ার সাইফুল ইসলাম। সে মাওলানা আবুল খায়ের মোল্লার ছেলে। আবুল খায়ের স্থানীয় মাঠেরহাট মসজিদে ইমামতি করেন। সাহস ইউনিয়নের নিকাহ রেজিস্ট্রার আব্দুর রবের সহকারী হিসেবেও কাজ করেন তিনি।
এদিকে ‘জঙ্গি’ সাইফুল ইসলাম নিহতের খবরে তার গ্রামের মানুষগুলো অনেকটাই হতবাক। যে ছেলে এলাকায় শান্ত, নম্র, ভদ্র বলে পরিচিত সেই ছেলে কীভাবে জঙ্গী হলো এ কথা ভেবেই এলাকার মানুষ উদ্বিগ্ন।
এ বিষয়ে পুলিশ সাইফুলের বাবা ও তার ২ বন্ধুকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। সাইফুলের বাবা আবুল খায়েরকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। তবে তার বন্ধু সামি ও ইসানের ব্যাপারে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। খুলনা রেঞ্জ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ডুমুরিয়া থানা পরিদর্শন করেছেন।খুলনা শহর থেকে ২৬ কিলোমিটার দূরে নোয়াকাটি গ্রাম। খুলনা শহর থেকে ১৫ কিলোমিটার গেলে ডুমুরিয়া উপজেলা সদর বাসস্ট্যান্ড। সেখান থেকে ১ কিলোমিটার গেলে ডুমুরিয়া থানা। থানা থেকে ডুমুরিয়া বারোআড়িয়া সড়কের প্রায় ১০ কিলোমিটার দক্ষিণে গেলে রাস্তার পাশেই সাইফুলদের বাড়ি। মঙ্গলবার (১৫ আগস্ট) বেলা ১১টার দিকে সেখানে পৌঁছালে দেখা যায় বিভিন্ন বয়সের শত শত নারী, পুরুষ। বাড়ির মধ্যে প্রবেশ করলে দেখা যায় টিনের চাল আর মাটির দেয়াল দেয়া জীর্ণ ঘর। ঘরের মধ্যে অন্ধকার। ঘরের খাটের উপর বসে চিৎকার করে কাঁদছে সাইফুলের ছোট বোন তামান্না খাতুন। তার পাশে নির্বাক বসে আছেন সাইফুলের বাক প্রতিবন্ধী মা আসমা বেগম। অঝোরে কেঁদে চলেছে সাইফুলের আরেক বোন ইরানী খাতুন।ইরানি খাতুন কাঁদছে আর বলছে, ‘আমার ভাই চাকরি করবে বলে ১০-১২ দিন আগে সার্টিফিকেট, ছবিসহ অন্যান্য কাগজ পত্র নিয়ে ঢাকায় গেছে। আজ শুনছি সে নাকি জঙ্গি। নিজের কাছে রাখা বোমায় নিহত হয়েছে।’ ইরানী জানায়, তার ভাই সাইফুল খুলনা শহরের বিএল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞান সম্মান শেষ বর্ষে লেখাপড়া করতো।
সাইফুল ইসলাম ডুমুরিয়ার উলা মজিদিয়া ইসলামীয়া মাদ্রাসা থেকে ২০১১ সালে দাখিল পাস করে। ২০১৩ সালে খুলনা কামিল মাদ্রাসা থেকে আলিম পাস করার পর বিএল কলেজে রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিষয়ে পড়ালেখা করতো।
স্থানীয় বাসিন্দা জসিম উদ্দিন বলেন, ‘সাইফুল খুব ভাল ছেলে ছিলো। মুরব্বিদের সম্মান করতো। কিন্তু কীভাবে জঙ্গি হলো বুঝতে পারছি না।’
সাহস ইউনিয়নের সংশ্লিষ্ট ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য খান শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘সাইফুলকে খুবই ভদ্র ছেলে হিসেবে জানি। সে কারও সাথে ঝগড়া করেছে এমন শুনিনি। ১০ দিন আগে বাড়ি থেকে নিজের একাডেমিক সার্টিফিকেট, ছবিসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে সাইফুল ইসলাম ঢাকায় যায়। তারপর মঙ্গলবার সাইফুলের নিহত হওয়ার কথা জানতে পারি।’
তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ‘কার মনে যে কি আছে বলা কঠিন। এখনকার তরুণরা যে কে কিভাবে গড়ে উঠছে তা বুঝতে পারছি না। ছেলে মেয়েদের ব্যাপারে সতর্ক হতে হবে।’
ডুমুরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাবিল হোসেন বলেন, ‘রাজধানীর ওলিও ইন্টারন্যাশনাল হোটেলে আত্মঘাতী বিস্ফোরণে নিহত জঙ্গি সাইফুলের গ্রামের বাড়ি ডুমুরিয়ার নোয়াকাটি গ্রামে। সাইফুলের বাবা আবুল খায়ের ও তার ২ বন্ধুকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।’
খুলনা জেলা পুলিশ সুপার নিজাম উল হক মোল্লা জানান, সাইফুলের বাবা আবুল খায়ের মোল্লা এবং সাইফুলের ২ বন্ধু সামী ও ইসানকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডুমুরিয়া থানায় আনা হয়। সাইফুলের বাবাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এলাকা ত্যাগ না করার নির্দেশ দিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। তবে তার ২ বন্ধুকে এখনও জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এ বিষয়টি পুলিশ সদর দফতর থেকে মনিটরিং করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
0 coment rios: