ক্লাসে ঢোকার মুখেই ডিজিটাল অ্যাটেনডেন্স। আঙুলের ছাপ দিয়ে ঢুকতে হয়। কোনো শিক্ষার্থী অনুপস্থিত থাকলে অভিভাবকের মোবাইল ফোনে পৌঁছে যাচ্ছে এসএমএস। ক্লাস হচ্ছে মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টরে। যশোরের এক অন্যরকম ‘ডিজিটাল স্কুল’।
নাম ডাকা, ইয়েস স্যার। এসব উঠে গেছে। উন্নত দেশের মতো ডিজিটাল পদ্ধতিতেই চলছে স্কুলের সব কর্মকাণ্ড। ৩২টি সিসি ক্যামেরা পুরো স্কুলে নজরদারি করছে। ল্যাবরেটরিতে বসে গ্রামের ছেলে-মেয়েরা ল্যাপটপ চালিয়ে বিশ্বকে জানার চেষ্টা করছে। আধুনিক পাঠদান ও শিক্ষাপদ্ধতি স্কুলটিকে অনন্য করে তুলেছে। এরই মধ্যে এই স্কুলের নাম হয়েছে ‘ডিজিটাল স্কুল’। কিন্তু স্কুলটির আসল নাম বাদশাহ ফয়সাল ইনস্টিটিউট। যশোর উপশহরের এই স্কুলটি দেখার জন্য এখন অন্য স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা আসছেন।
জানা যায়, এই স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা এক হাজার ৪০০ জন। প্রধান শিক্ষক আছাহাবুল গাজীর নেতৃত্বে ৩২ জন বিজ্ঞানমনস্ক আইসিটি জ্ঞানসম্পন্ন শিক্ষক ছাত্র-ছাত্রীদের পাঠদান করছেন। একটি কেন্দ্রীয় সাউন্ড সিস্টেম পদ্ধতির মাধ্যমে প্রধান শিক্ষক শ্রেণি শিক্ষকদের পাঠদান দেখছেন। তিনি প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন। এই সাউন্ড সিস্টেমের মাধ্যমে অবসর সময়ে শিক্ষার্থীদের দেশাত্মবোধক গান শোনানো হয়। জঙ্গি ও মাদকবিরোধী উপদেশ দেওয়া হয়। আরিফুর রহমান নামের একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার স্কুলে একটি সফটওয়্যার ডেভেলপ করে শিক্ষার্থীদের আলাদা আলাদা আইডি তৈরি করেছেন। অনলাইনের মাধ্যমে জানানো হচ্ছে ফলাফল। নেওয়া হচ্ছে বেতনসহ অন্যান্য ফি।
স্কুলের আইসিটি শিক্ষক জাবেরা খাতুন বললেন, ‘আমাদের স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির আন্তরিক চেষ্টায় আমরা সনাতন পদ্ধতি ছেড়ে ডিজিটাল দুনিয়ায় প্রবেশ করেছি। ’
জানা যায়, কোনো রকম আর্থিক সহযোগিতা ছাড়াই স্থানীয় বিদ্যানুরাগী ব্যক্তিরা ১৯৮৫ সালে বাদশাহ ফয়সালের নামে স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর স্কুলটি খুব বেশি দূর এগোতে পারেনি। ২০১৪ সালে এই স্কুলের পরিচালনা কমিটির সভাপতির দায়িত্ব নেন সমাজসেবক মিজানুর রহমান খান। তিনি চীন, জাপানসহ আরো কয়েকটি দেশ ঘুরে আধুনিক ডিজিটাল স্কুল দেখে আসেন। এরপর নিজের খরচে স্কুলটিকে ডিজিটালাইজড করেন। তিনি বললেন, ‘শতভাগ ডিজিটাল করার জন্য আমি শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীর সঙ্গে মিটিং করেছি। দেশ-বিদেশ ঘুরে ভালো স্কুল দেখেছি। এখন সিসি ক্যামেরার আওতায় পুরো স্কুল থাকার কারণে ইভ টিজিং শূন্যে নেমে এসেছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থী উভয়েই লেখাপড়ায় মনোযোগী হয়েছে। এখনো অনেক কাজ বাকি।
প্রধান শিক্ষক বললেন, ‘এখানে গরিব অসহায় ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া করে। তাদের স্বপ্ন দেখাচ্ছি। গত ৫ বছর পিএসসি, জেএসসি, এসএসসিতে আমাদের পাসের হার শতভাগ। খেলাধুলায়ও স্কুলের ছেলে-মেয়েরা এগিয়ে রয়েছে। আমরা পর পর ১৫ বার ক্রিকেটে জেলা চ্যাম্পিয়ান হয়েছি। ফুটবলেও এগিয়ে আছি। এখন আমরা পুরোপুরি ডিজিটাল হওয়ার জন্য সংগ্রাম করছি। ’
0 coment rios: