নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনের লক্ষ্যে বাছাইকৃত ১০ জনের তালিকা চূড়ান্ত করতে আজ বৈঠকে বসছে সার্চ (অনুসন্ধান) কমিটি। কমিটির পূর্ব নির্ধারিত এ বৈঠক বিকালে সুপ্রিম কোর্টের জাজেস লাউঞ্জে অনুষ্ঠিত হবে। এদিকে বৈঠকের পর সন্ধ্যায় প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন সার্চ কমিটির সদস্যরা।
তবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে সাবেক এক আমলার ওপর আস্থা রাখতে চাইছেন রাষ্ট্রপতি গঠিত সার্চ কমিটিসহ সরকারসংশ্লিষ্টরা। এ পদে বিচারপতিদের বিষয়ে আলোচনা এলেও ‘অনেকের’ অনিচ্ছায় তা হচ্ছে না।
এ প্রসঙ্গে সুজন সভাপতি বদিউল আলম মজুমদার বলেন, এটি বলা দুরূহ, তারা আমাদের মতামত কতটুকু গ্রহণ করবে। কাদের দিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন করা যেতে পারে, তার একটি মানদ- আমরা দিয়েছি। সেই মানদণ্ডের মধ্যে নাম সুপারিশ করলে আশা করি ইসি ভালো হবে।
রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব জয়নাল আবেদীন গতকাল বিকালে সাংবাদিকদের জানান, সার্চ কমিটির সদস্যরা সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। সরকারের উচ্চপর্যায়ে ইসি গঠনের বিষয়ে কয়েকটি নাম ঘুরেফিরে আসছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে সাবেক মুখ্য সচিব ও জনতা ব্যাংকের বর্তমান চেয়ারম্যান শেখ মোহাম্মদ ওয়াহিদ উজ-জামান এবং সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়ার নাম রয়েছে। মোশাররফ হোসেন ছাত্রজীবনে সরকার বিরোধী ঘরনার একটি পত্রিকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি ছিলেন। তাই অনেকে তার ওপর আস্থা রাখতে পারছেন না।
কমিশনার হিসেবে পিএসসির সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল করিম, একরাম আহমেদ ও এটি আহমেদুল হক আলোচনায় আছেন। আহমেদুল হক ভূতাপেক্ষ আইজিও ছিলেন। আলোচনায় রয়েছেন সাবেক জেলা জজ ও ইসলামী ব্যাংকের বর্তমান পরিচালক বোরহান উদ্দিন, পাসপোর্ট ও বহিরাগমন অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক আবদুল মাবুদের নামও। নারীদের মধ্যে সাবেক বিচারক কবিতা খানম এবং সাবেক নির্বাচন কমিশন কর্মকর্তা জেসমিন টুলির নাম আলোচনায় আসছে বেশি।
এ বিষয়ে আলোচনা করতে আজ রাতে স্থায়ী কমিটির জরুরি বৈঠক ডেকেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ইসি গঠনের কয়েকদিন আগে খালেদা জিয়া এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করতে পারেন। এর উদ্দেশ্য হলো নিরপেক্ষ ও শক্তিশালী ইসি গঠন করতে রাষ্ট্রপতি ও সরকারকে চাপে রাখা। আজ রাতে বৈঠকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হতে পারে।
জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সার্চ কমিটি যে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন, তাতে আমরা আশাবাদী হয়েছি। আমরা মনে করছি, বিশিষ্ট ব্যক্তিরা নিরপেক্ষ ও শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন গঠনে গুরুত্বপূর্ণ মতামত দিয়েছেন। তাদের মতামত অনুযায়ী ইসি গঠন করলে তা গ্রহণযোগ্য হবে। তাছাড়া রাজনৈতিক দলগুলো সার্চ কমিটিতে যে তালিকা দিয়েছে, সেখানে গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী দেখা যায়, অধিকাংশ নাম নিরপেক্ষ। এক ব্যক্তির নাম একাধিক রাজনৈতিক দলের তালিকায় রয়েছে। রাষ্ট্রপতি সেগুলো বিবেচনায় নিতে পারেন। বিশিষ্টজনের মতামত এবং রাজনৈতিক দলের তালিকার বাইরে যাওয়া হবে দুঃখজনক। সরকার সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চাইলে সবার গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠন করবেন। তিনি বলেন, রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্ট কিংবা রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ছিলেন এমন কাউকে নিয়োগ করা ঠিক হবে না।
নির্বাচন কমিশন গঠনে ২৫ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনকে প্রধান করে ছয় সদস্যের সার্চ কমিটি গঠন করেন। কমিটিকে ৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে রাষ্ট্রপতিকে ইসি গঠনের জন্য ১০ জনের নাম সুপারিশ করতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, সংসদের বাইরে থাকা প্রধান বিরোধী দল বিএনপির তালিকা থেকে একজনের নাম রাখার বিষয়টি সরকারের উচ্চপর্যায়ে আলোচনা হচ্ছে। তবে এর বিরোধিতাও রয়েছে। এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত কী আসে তা জানতে ইসি গঠন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
সরকারের উচ্চপর্যায়ের সূত্রগুলো বলছে, ইসি গঠনের ব্যাপারে পশ্চিমা রাষ্ট্রসহ দাতা সংস্থাগুলো দৃষ্টি রাখছে। সরকার সংশ্লিষ্ট কয়েকজনের সঙ্গে বিএনপি এবং দাতা সংস্থাগুলোরও অনানুষ্ঠানিক কথাবার্তা হয়েছে। তবে সে আলোচনার ‘ফল’ কী তা জানা যায়নি। যদিও মির্জা ফখরুল বলেছেন, তাদের সঙ্গে সরকারের আলোচনার খবর সম্পূর্ণ মিথ্যা।
এদিকে সার্চ কমিটির সুপারিশ করা নাম প্রকাশ করা হবে কিনা,তা নিয়ে মতবিরোধ দেখা দিয়েছে। সরকার চায় না, ইসি গঠনের আগে নাম প্রকাশ করা হোক। তাহলে সম্ভাব্যদের নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য ও বিরোধী দলগুলোর বিরোধিতার কারণে পুরো বিষয়টি প্রশ্নের মুখে মধ্যে পড়তে পারে।
একই বিষয়ে জানতে চাইলে কমিটির এক সদস্য বলেন, রাষ্ট্রপতির কাছে যে নামের তালিকা জমা দেওয়া হবে সেটা গণমাধ্যমে প্রকাশের কথা বলেছেন বিশিষ্টজনদের কেউ-কেউ। গতবারের সার্চ কমিটি কিন্তু গোপনীয়তা রক্ষা করেই রাষ্ট্রপতির কাছে নামের তালিকা হস্তান্তর করেছিলে। অযথা বিতর্ক এড়াতে এবারও হয়তো গতবারের পথই অনুসরণ করা হবে বলেও জানান তিনি।
সার্চ কমিটির এক সদস্য বলেন, সিইসিসহ কমিশনার যাদের নাম তারা প্রস্তাব করবেন, তাদের পেশাগত জীবনের রেকর্ড, রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা, সততা, বিতর্কিত কিনা, বিষয়গুলো পর্যালোচনা করা হচ্ছে। তালিকা তৈরির ক্ষেত্রে কী কী বিষয় প্রাধান্য পাচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অবশ্যই সৎ, মেধাবী, মর্যাদাসম্পন্ন, গ্রহণযোগ্য এবং বিতর্কমুক্ত ব্যক্তিদেরই চাচ্ছি আমরা। তথ্য উৎসঃ আমাদের সময়।
0 coment rios: