
পদ্মায় সেতুর কাজ এগিয়ে চলেছে। চীন থেকে আসা পদ্মা সেতুর চতুর্থ স্প্যান (১৫০ মিটার সুপার স্ট্রাকচার) শুক্রবার রাতে কুতুবদিয়া চ্যানেলে পৌঁছেছে। এখন এটি মাওয়ার পথে রয়েছে। গত ১৩ নভেম্বর মাদার ভ্যাসেলে করে চীন থেকে এটি সমুদ্র পথে রওনা হয়। বাকি স্প্যান তৈরির কাজও পুরোদমে চলছে চীনে।
মাওয়ায় আসা তিনটি স্প্যান ফিটিংয়েও অগ্রগতি রয়েছে। প্রথমটির ফিটিং সম্পন্ন হয়েছে। এখন চলছে লোড পরীক্ষা। আর দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্প্যানেরও ফিটিং চলছে মাওয়ার কুমারভোগস্থ বিশেষ ওয়ার্কশপে।
জাজিরা প্রান্তে সংযোগ সেতুর ২৭টি পাইল স্থাপন হয়েছে। নদীতেও সেতুর ভিত তৈরির কাজ চলছে। ৩৭ নম্বর পিলারের পাশাপাশি ৩৮ নম্বর পিলারেও ৬টি পাইল স্থাপন হয়েছে।
পদ্মাসেতুতে কর্মরত দায়িত্বশীল এক প্রকৌশলী জানান, এখন পাইলের ভেতরের মাটি সরানো হচ্ছে আধুনিক প্রক্রিয়ায়। এরপরই কংক্রিটিং হবে। আর ৩৭ নম্বরও পিলারও কংক্রিটিংয়ের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে। এর পরই বসবে পিলার। তবেই পিলার সম্পন্ন হবে।
পিলার পুরোপুরি সম্পন্ন হওয়ার পর সদ্য আসা ৩ হাজার ৬শ’ টন ক্ষমতার ভাসমান ক্রেন দিয়ে প্রথম স্প্যানটি বসানো হবে। সে লক্ষেই এখন কাজ চলছে। আর পাশাপাশি অন্য স্প্যানগুলো বসানোর প্রস্তুতি নিয়েও কর্মতৎপরতা চলছে পুরো প্রকল্পজুড়ে।
এদিকে নদী শাসনের কাজেও অগ্রগতি হয়েছে। মাওয়া ও জাজিরা প্রান্তে পুরোদমে কাজ চলছে। মাওয়ায় উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ড্রেজার দিয়ে নদী তলদেশ যথাযথ করা হচ্ছে। এরপরই বস্তা ফেলা ও ব্লক ফেলা ও তীরে ব্লক বসানো হবে। এই শুষ্ক মৌসুমে নদী শাসনের অনেক অগ্রগতি হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
পদ্মাসেতুর সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল প্রকৌশলী বলেন, মূল নদী শাসনের কাজ করছে চীনা ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সিনো হাইড্রো। আর মাওয়া প্রান্তের উজানে নদী ভাঙ্গন ঠেকাতে জসলদিয়া এলাকায় ১ দশমিক ৩ কিলোমিটার এলাকায় নদী শাসনের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে। পদ্মা সেতু কর্তৃপক্ষ প্রায় ৪শ’ কোটি টাকার এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। এতে উজানের নদী ভাঙ্গন বন্ধসহ সেতুর ঝুঁকি কমবে। ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকেই কাজ শুরু হওয়ার কথা।
জানুয়ারি থেকে শিমুলিয়া-কাওড়াকন্দি ফেরি ঘাট স্থানান্তরিত হয়ে শিমুলিয়া-কাঠাঁলবাড়িতে যাচ্ছে।
পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তের এ্যাপ্রোচ সড়কও প্রস্তুত। পাচ্চর থেকে কাঠাঁলবাড়ি পর্যন্ত প্রায় পাঁচ কিলোমিটার এ্যাপ্রোচ সড়ক পুরোপুরি প্রস্তুত। এ্যাপ্রোচ সড়কের কাজ চলছে এখন টোল প্লাজার কাছাকাছি। জাজিরা প্রান্তের এ্যাপ্রোচ সড়কের ৮৫ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। আর টোল প্লাজর কাজও শেষ পর্যায়ের। মাওয়া প্রান্তের টোল প্লাজা এবং এ্যাপ্রোচ সড়ক দু’টিই শেষ পর্যায়ে।
পদ্মা সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী দেওয়ান আব্দুল কাদের জানান, ইতোমধ্যে প্রথম স্প্যান পরিমাণ সুপার স্ট্রাকচার পুরোপুরি জোড়া লাগানো হয়েছে। দ্বিতীয় স্প্যানটির জোড়া লাগানোর কাজও প্রায় শেষের দিকে। প্রথম স্প্যানটির সুপার সট্রাকচার জোড়া লাগানোর পর এখন চলছে লোড পরীক্ষা। সাধারণত এই ব্রিজে মালামাল ও যানবাহনসহ ওজন ধারণ ক্ষমতা ৮৯৬ টন। এই পরিমাণ ওজনের কোন কিছু সেতুর উপর দিয়ে গেলেও ব্রিজের কোন ক্ষতি হবে না। কিন্তু ইঞ্জিনিয়ারিং হিসাব অনুযায়ী এর দেড়গুণ অর্থাৎ ১ হাজার ৩৪৪ টন লোড দিয়ে এর পরীক্ষা করা হচ্ছে। এই পরীক্ষার জন্য মাওয়া প্রান্তে লৌহজংয়ের কুমারভোগ কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডে তৈরি করা হয়েছে ব্রিজের বিশেষ প্লাটফর্ম। করা হয়েছে পাইল ক্যাপ। এর উপর বসিয়ে দেয়া হয়েছে সুপার স্ট্রাকচারের একটি স্প্যান। সোমবার থেকে এই সুপার স্ট্রাকচারের উপর দেয়া হচ্ছে লোড। ১ হাজার ৩৪৪ টন ওজনের স্টীলের প্লেট লোড বা ওজন হিসেবে বসানো হচ্ছে। এই লোড টেস্ট সফল হলে এক স্প্যান পরিমাণ এই সুপার স্ট্রাকচার আগামী নতুন বছরের ফেব্রুয়ারি নাগাদ বসিয়ে দেয়া হবে।
পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তের ৩৭ ও ৩৮ নম্বর পিলারে বসবে প্রথমটি। আর দ্বিতীয় স্প্যানটি বসবে ৩৮ ও ৩৯ নম্বর পিলালের উপর। এটির কাজও দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে।
গত দুই সপ্তাহ আগে থেকে জাজিরা প্রান্তে ৮শ’ কেজির প্লাস্টিক বস্তা ফেলা শুরু হয়েছে। মাওয়া প্রান্তেও নদী শাসনের জন্য ড্রেজিংয়ের কাজ চলছে। উচ্চ ক্ষমতার এই ড্রেজার ঘণ্টায় ৪ থেকে ৫ হাজার কিউবিক মিটার মাটি অপসারণ করছে। ড্রেজিং সম্পন্ন হলেই ফেলা হবে কয়েক ধাপে বালুর বস্তা। পাঁচ লেয়ারে ৮শ’ কেজির বস্তা ফেলা হবে সেখানে।
ঢাকা, ডিসেম্বর ০৬(বিডিলাইভ২৪)// কে এইচ
0 coment rios: