শহর থেকে যশোর রোড ধরে শতবর্ষী রেইনট্রির ছায়া মাড়িয়ে বেনাপোলের দিকে ১৮ কিলোমিটার গেলেই গদখালী বাজার। সেখান থেকে পূর্বদিকের রাস্তা ধরে কিছু দূর এগোলেই শের আলীর ফুল সাম্রাজ্য। ৬ বিঘা জমিতে আধুনিক উপায়ে চাষ করছেন ইউরোপের অনিন্দ্য সুন্দর ফুল জারবেরা। আরও চার বিঘা জমিতে রয়েছে রথস্টিক, গ্যালেনডোলাসহ নানারকম ফুল। ১৯৮২ সালে ছোট্ট একটি নার্সারি থেকে বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষ শুরু করেন শের আলী। যদিও নিজে স্বীকার করেন না, কিন্তু বলা হয়ে থাকে- দেশে বাণিজ্যিকভাবে ফুলচাষের পথিকৃৎ তিনিই। এখন সব খরচ বাদে বছরে তার লাভ থাকে ২০ লক্ষাধিক টাকা। হয়েছেন কোটিপতি কৃষক। ঘুরেছেন বিশ্বের ১৮টি দেশ। গত তিন দশকে পুরো ঝিকরগাছা উপজেলায় এক শের আলী থেকে তৈরি হয়েছে সাড়ে ৫ হাজারেরও বেশি শের আলী। সাড়ে তিন হাজারেরও বেশি হেক্টর জমিতে তারা উৎপাদন করছেন মন মাতানো দেশি-বিদেশি ফুল। রজনীগন্ধা, গোলাপ, গাঁদা, গ্লাডিওলাস, জারবেরা, রথস্টিক, জিপসি, গ্যালেনডোলা, চন্দ্রমল্লিকার বাগান মাঠের পর মাঠজুড়ে। চাষ হয় সারা বছর। তবে সবচেয়ে বেশি চাহিদা থাকে ইংরেজি নতুন বছরের প্রথম দিন, পয়লা বসন্ত, ভালোবাসা দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে। সারা বছরের তুলনায় এ কয়টি দিবসে ফুল বিক্রি হয় কয়েকগুণ বেশি। আর সে দিনগুলোকে সামনে রেখেই এখন মাঠে মহাব্যস্ত গদখালী ইউনিয়নের পানিসারা, হাড়িয়া, কৃষ্ণচন্দ্রপুর, পটুয়াপাড়া, সৈয়দপাড়া, মাটিকুমড়া, বাইসা, কাউরা, ফুলিয়া গ্রামের ফুলচাষিরা। ফুলিয়া গ্রামের ফুলচাষি শের আলী বলেন, এখানকার ফুলচাষিরা ক্রমেই দক্ষ হয়ে উঠছেন। তারা আন্তর্জাতিকমানের ফুল উৎপাদন করছেন। নিজস্ব উদ্যোগে কিছু পরিমাণ ফুল মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে পাঠানোও হচ্ছে। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে ফুল রপ্তানির মাধ্যমে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। এটা করতে পারলে চাষিরাও ফুলের ভালো দাম পাবেন। পানিসারা গ্রামের আবদুল লতিফ বলেন, সারা বছর ফুল উৎপাদন ও বিক্রি হলেও এখানকার চাষিরা বসন্তবরণ, ভালোবাসা দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের দিকে তাকিয়ে থাকেন। এ দিনগুলোতেই তারা সবচেয়ে বেশি ফুল বিক্রি করতে পারেন এবং দামও ভালো পান। আর ওই দিনগুলোতে তারা যাতে বাজারে ফুল উঠাতে পারেন, সেই লক্ষ্যেই তারা এখন মাঠে ব্যস্ত সময় পার করছেন। তিনি বলেন, তাদের উৎপাদিত ফুল গদখালী বাজার থেকে রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের প্রায় ৫২টি জেলায় যায়। ওইসব জায়গা থেকে ফুল ব্যবসায়ীরা গদখালী বাজারে এসে ফুল কিনে নিয়ে যান। কাউরা গ্রামের আবদুর রাজ্জাক বলেন, দেশের মোট চাহিদার ৭০ ভাগ ফুল যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালীতে চাষ হয়। অথচ এখানে ফুল ও ফুলবীজ সংরক্ষণের জন্য বিশেষায়িত কোনো হিমাগার নেই। এজন্য চাষিদের খুবই সমস্যায় পড়তে হয়। কোনো ফুলের চাষ বেশি হয়ে গেলে দাম পড়ে যায়। রাজনৈতিক অস্থিরতায় পরিবহন চলাচল বন্ধ হয়ে গেলে দ্রুত পচনশীল এ পণ্যটি নিয়ে বিপদে পড়ে যান চাষিরা।
বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির সভাপতি আবদুর রহিম বলেন, গত বছর রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যেও ভালোবাসা দিবস, বসন্তবরণ, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে গদখালীতে প্রায় ৮ কোটি টাকার ফুল কেনা-বেঁচা হয়। এবার আবহাওয়া অনুকূলে, রাজনৈতিক পরিস্থিতিও ভালো। ফলে তিনটি দিবসে ১০ থেকে ১৫ কোটি টাকার ফুল কেনা-বেঁচা হবে বলে আশা করছি। তিনি আরও বলেন, কিছু ব্যাংক ৯ শতাংশ সুদে ফুলচাষিদের ৫০ হাজার টাকা করে ঋণ দিচ্ছে। আমাদের দাবি ছিল কৃষিভিত্তিক লোন দেওয়ার জন্য। কিন্তু এখন দেওয়া হচ্ছে ১০ টাকার অ্যাকাউন্টের বিপরীতে। ফলে চাষিদের ঋণ নেওয়ার পরের মাস থেকেই কিস্তি পরিশোধ শুরু করতে হচ্ছে। তিনি বলেন, ফুল ও ফুলের বীজ সংরক্ষণের বিষয়টি নিয়েও তেমন কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। ফলে কোনো কারণে যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে গেলে মারাত্মক ক্ষতির শিকার হন ফুলচাষিরা। তবে ফুলচাষিদের ব্যাপারে সরকার সম্প্রতি কয়েকটি ভালো সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ১৩ অক্টোবর কৃষি সচিবের নেতৃত্বে একটি সভা হয়। সেখানে ফুলের ওপর আলাদা প্রজেক্ট তৈরির সিদ্ধান্ত হয়। এ ছাড়া যশোরে ফুল গবেষণা কেন্দ্র স্থাপনের ব্যাপারেও সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে আবদুর রহিম অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে হতাশা প্রকাশ করে বলেন, এসব প্রজেক্ট প্রথমে যেভাবে তৈরি করা হবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, শেষ পর্যন্ত আর সেরকম থাকে না। ফলে প্রজেক্টে যাদের সুফলভোগী হওয়ার কথা, তারা সেভাবে সুফল পান না। ঝিকরগাছা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাহিদুল আলম বলেন, শুধু ঝিকরগাছাতে এবার ৬১৭ হেক্টর জমিতে বাণিজ্যিকভাবে বিভিন্ন ধরনের ফুল চাষ হচ্ছে। গত বছর চাষ হয়েছিল ৬১৪ হেক্টর জমিতে। তিনি জানান, সারা বছরজুড়েই ঝিকরগাছায় ফুলের চাষ হয়। তবে সবচেয়ে ভালো মানের ফুল পাওয়া যায় ডিসেম্বরে। তিনি বলেন, সাধারণ কোল্ডস্টোরেজেই আলুর সঙ্গে ফুলের বীজ সংরক্ষণ করছেন ফুলচাষিরা। এতে কিছুটা সমস্যা হয়। যশোরে স্বল্প পরিসরে ফুলবীজ সংরক্ষণের ব্যবস্থা আছে। কিন্তু সেখানে গিয়ে বীজ সংরক্ষণের বিষয়টি কিছুটা ব্যয়বহুল বলে চাষিরা সেটা করছেন না। এক প্রশ্নের জবাবে জাহিদুল আলম বলেন, আমাদের পক্ষ থেকে সারাবছরই ফুলচাষিদের বিভিন্নরকম টেকনোলজি সাপোর্ট দেওয়া হয়। বিভিন্ন রোগ ও পোকার আক্রমণ থেকে ফুল রক্ষা, কখন কোনো ফুলের চাষ করতে হবে, মাটিতে সারের ঘাটতি আছে কিনা, বা কোন সার দিতে হবে, ফুল কাটার আগে ও পরে কীভাবে ফুলকে সতেজ রাখতে হবে ইত্যাদিসহ প্যাকেজিং, গ্রেডিং বিষয়ে চাষিদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির সভাপতি আবদুর রহিম বলেন, গত বছর রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যেও ভালোবাসা দিবস, বসন্তবরণ, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে গদখালীতে প্রায় ৮ কোটি টাকার ফুল কেনা-বেঁচা হয়। এবার আবহাওয়া অনুকূলে, রাজনৈতিক পরিস্থিতিও ভালো। ফলে তিনটি দিবসে ১০ থেকে ১৫ কোটি টাকার ফুল কেনা-বেঁচা হবে বলে আশা করছি। তিনি আরও বলেন, কিছু ব্যাংক ৯ শতাংশ সুদে ফুলচাষিদের ৫০ হাজার টাকা করে ঋণ দিচ্ছে। আমাদের দাবি ছিল কৃষিভিত্তিক লোন দেওয়ার জন্য। কিন্তু এখন দেওয়া হচ্ছে ১০ টাকার অ্যাকাউন্টের বিপরীতে। ফলে চাষিদের ঋণ নেওয়ার পরের মাস থেকেই কিস্তি পরিশোধ শুরু করতে হচ্ছে। তিনি বলেন, ফুল ও ফুলের বীজ সংরক্ষণের বিষয়টি নিয়েও তেমন কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। ফলে কোনো কারণে যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে গেলে মারাত্মক ক্ষতির শিকার হন ফুলচাষিরা। তবে ফুলচাষিদের ব্যাপারে সরকার সম্প্রতি কয়েকটি ভালো সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ১৩ অক্টোবর কৃষি সচিবের নেতৃত্বে একটি সভা হয়। সেখানে ফুলের ওপর আলাদা প্রজেক্ট তৈরির সিদ্ধান্ত হয়। এ ছাড়া যশোরে ফুল গবেষণা কেন্দ্র স্থাপনের ব্যাপারেও সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে আবদুর রহিম অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে হতাশা প্রকাশ করে বলেন, এসব প্রজেক্ট প্রথমে যেভাবে তৈরি করা হবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, শেষ পর্যন্ত আর সেরকম থাকে না। ফলে প্রজেক্টে যাদের সুফলভোগী হওয়ার কথা, তারা সেভাবে সুফল পান না। ঝিকরগাছা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাহিদুল আলম বলেন, শুধু ঝিকরগাছাতে এবার ৬১৭ হেক্টর জমিতে বাণিজ্যিকভাবে বিভিন্ন ধরনের ফুল চাষ হচ্ছে। গত বছর চাষ হয়েছিল ৬১৪ হেক্টর জমিতে। তিনি জানান, সারা বছরজুড়েই ঝিকরগাছায় ফুলের চাষ হয়। তবে সবচেয়ে ভালো মানের ফুল পাওয়া যায় ডিসেম্বরে। তিনি বলেন, সাধারণ কোল্ডস্টোরেজেই আলুর সঙ্গে ফুলের বীজ সংরক্ষণ করছেন ফুলচাষিরা। এতে কিছুটা সমস্যা হয়। যশোরে স্বল্প পরিসরে ফুলবীজ সংরক্ষণের ব্যবস্থা আছে। কিন্তু সেখানে গিয়ে বীজ সংরক্ষণের বিষয়টি কিছুটা ব্যয়বহুল বলে চাষিরা সেটা করছেন না। এক প্রশ্নের জবাবে জাহিদুল আলম বলেন, আমাদের পক্ষ থেকে সারাবছরই ফুলচাষিদের বিভিন্নরকম টেকনোলজি সাপোর্ট দেওয়া হয়। বিভিন্ন রোগ ও পোকার আক্রমণ থেকে ফুল রক্ষা, কখন কোনো ফুলের চাষ করতে হবে, মাটিতে সারের ঘাটতি আছে কিনা, বা কোন সার দিতে হবে, ফুল কাটার আগে ও পরে কীভাবে ফুলকে সতেজ রাখতে হবে ইত্যাদিসহ প্যাকেজিং, গ্রেডিং বিষয়ে চাষিদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
0 coment rios: