যশোর শহরের সোহাগ , ঈগল , হানিফ , গ্রিন লাইন , একে ট্রাভেলসহসহ অধিকাংশ পরিবহনের কাউন্টারে ঘুরে জানা গেছে , ঈদের পর দিন (৮ জুলাই) থেকে ১৩ ...
যশোর শহরের সোহাগ, ঈগল, হানিফ, গ্রিন লাইন, একে ট্রাভেলসহসহ অধিকাংশ পরিবহনের কাউন্টারে ঘুরে জানা গেছে, ঈদের
পর দিন (৮ জুলাই) থেকে ১৩ জুলাই পর্যন্ত অগ্রিম ফিরতি টিকিট বিক্রি শেষ
হয়েছে। গত ৩০ জুন থেকে ফিরতি টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে। ঈদের পরবর্তী
তিনদিনের কোনো টিকিট নেই বলে জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে যাত্রীদের। এতে অল্পদিনের
ছুটিতে আসা যাত্রীরা ফিরতি টিকিট না পেয়ে উদ্বিগ্ন। বাড়তি দামেও মিলছে না
ঈদ পরবর্তী তিনদিনের কোনো বাসের টিকিট।
গ্রিন লাইন পরিবহনের সেলস অফিসার ওমর ফারুক জানান, ১৩
জুলাই পর্যন্ত তাদের পরিবহনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শেষ হয়েছে। পরবর্তীতে
গাড়ির সংখ্যা বাড়লে আসনও বাড়বে। এসি গাড়ির টিকিট ১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি
হচ্ছে। আগে এই টিকিটের মূল্য ছিল ১ হাজার ১০০ টাকা।
ঈগল পরিবহনের যশোর গাড়িখানা কাউন্টারের ম্যানেজার শামসুল আলম জানান, ৩০
জুন থেকে অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে। এসির ১ হাজার ১০০ টাকার টিকিট
বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৬০০ টাকায়। চেয়ারের ৪৮০ টাকার টিকিট ৬২০ টাকায় বিক্রি
হচ্ছে। ১২ জুলাই পর্যন্ত সব টিকিট বিক্রি শেষ হয়েছে।
শামসুল আলম আরও বলেন, ফিরতি গাড়ি ঢাকা থেকে খালি আসবে, তাই
ভাড়া একটু বেশি নেওয়া হচ্ছে। তারপরও ঈদে গাড়িতে লাভ হয় না। টিকেট
কালোবাজারের অভিযোগ সঠিক নয়। অনেকে টিকিট কেনার পর ফেরত দিয়ে যায়। কারো
কপাল ভালো হলে এই টিকিট পাচ্ছেন। এটা কালোবাজারি নয় বলে দাবি করেন তিনি।
গাড়িখানা সড়কের একে ট্রাভেলসের কাউন্টারে
১১ জুলাই পর্যন্ত টিকিট বিক্রি শেষ হয়ে গেছে। একে ট্রাভেলস এসি বাসে ৯০০
টাকার টিকিট ১ হাজার ৩৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। নন এসি ৪৮০ টাকার টিকিট ৬১৫
টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
হানিফ পরিবহনের যশোর গাড়িখানা রোডের সেলসম্যান আশিকুর রহমান বলেন, যশোরের
৬টি কাউন্টারে গত ১ জুলাই থেকে ফিরতি টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে। আগামী ১২
জুলাই পর্যন্ত সিট খালি নেই। অনেকে টিকিট কিনতে এসে ফিরে যাচ্ছেন। আরএম টু
এসি ১ হাজার ১০০ টাকার টিকিট ১ হাজার ৬০০ টাকায়, নন এসি সুপার সেলুন ৪৮০ টাকার টিকিট ৬২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
যশোরের বঙ্গবাজার এলাকার সোহাগ পরিবহন কাউন্টারের বুকিং ডিলার পলাশ ঘোষ জানান, ১২ জুলাই পর্যন্ত অগ্রিম টিকিট বিক্রি শেষ। ১ হাজার ১০০ টাকার এসি টিকিট ১ হাজার ৩০০ টাকা বিক্রি করছেন।
যাত্রীদের অভিযোগ, কাউন্টার থেকে টিকিট নেই বললেও পরবর্তীতে ‘বিশেষ ব্যবস্থায়’ মিলছে টিকিট। এর জন্য গুণতে হচ্ছে বাড়তি টাকা ও মুখচেনা মানুষ। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বাস কাউন্টার কর্তৃপক্ষ। তারা বলছেন, ২-১ জন যাত্রী টিকিট ফিরিয়ে দিলে কেউ কেউ পাচ্ছেন। তবে সেই সংখ্যা খুবই কম।
বিল্লাল বিন কাশেম নামের একজন সরকারি কর্মকর্তা বলেন, শহরের
অধিকাংশ পরিবহন কাউন্টার ঘুরে ৮ জুলাইয়ের টিকিট না পেয়ে ফিরে এসেছি। পরে
পরিচিত একজনের মাধ্যমে একটি টিকিট পেয়েছি। এজন্য অতিরিক্ত ৫০০ টাকা দিতে
হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ফিরতি টিকিটের জন্য অনেকে বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ।
একে ট্রাভেলসের কাউন্টারে কথা হয় যশোরের
পুলেরহাট এলাকার মোস্তাফিজুর রহমান নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে। তিনি জানালেন,
ছোট ভাই ঢাকায় কোচিং করে। তার জন্য ৯ জুলাইয়ের টিকিট দরকার। কিন্তু কোথাও
মিলছে না টিকিট। একজন বড় ভাইকে খবর দিয়েছি। তিনি আসলে দেখি চেষ্টা করে
বিশেষ ব্যবস্থায় টিকিট পায় কি না। কাউন্টার থেকে বলছে টিকিট নেই। আবার পরে
বিশেষ ব্যবস্থায় অতিরিক্ত দাম দিলে পাওয়া যাচ্ছে টিকিট।
ঢাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শরিফুল ইসলাম জানালেন, কাউন্টারে
কাউন্টারে ঘুরে ৯ জুলাইয়ের টিকিট পাচ্ছেন না। কাউন্টার থেকে জানিয়ে দেওয়া
হচ্ছে ১২ জুলাই পর্যন্ত সিট খালি নেই। এখন বিকল্প হিসেবে ট্রেনের যাওয়ার
প্রস্তুতি নিচ্ছি। তবে ট্রেনে অনেক সময় লেগে যায়।
যাত্রীদের অভিযোগ, বাড়তি দামে কাঙ্খিত টিকিট পাওয়া যাচ্ছে না। অনেক কাউন্টারের কর্মকর্তা, কর্মচারীরা
কৃত্রিম সংকটের সৃষ্টি করছে। পরে চড়া দামে কালোবাজারে বিক্রি করছে।
কাউন্টারগুলোতে ভিড় বাড়ছে প্রতিদিন ফিরতি টিকিট কেনার জন্য। অধিকাংশ পরিবহন
কাউন্টারে ১২-১৩ জুলাই পর্যন্ত অগ্রিম টিকিট বিক্রি শেষ হয়েছে। ঈদে ঘরে
ফেরা মানুষগুলো যথাসময়ে কর্মস্থলে ফেরা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছে। অনেকে
বিকল্প হিসেবে রেলে যাত্রার চিন্তা করছেন।