যশোর শহরের মণিহার সিনেমা হলের সামনে দিয়ে যশোর-খুলনা মহাসড়ক ধরে এগিয়ে গেলে রাস্তার দুই পাশে চোখে পড়ে অসংখ্য অটোমোবাইল ওয়ার্কশপ। এসব ওয়ার্কশপের সামনে নির্মাণ করা হচ্ছে বাস, ট্রাক, পিকআপসহ বিভিন্ন ধরনের যানবাহনের বডি। অভিজ্ঞ কারিগর আর খরচ কম হওয়ায় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বাস, ট্রাক, পিকআপের মালিকরা তাদের গাড়ির বডি যশোরের এসব ওয়ার্কশপ থেকে তৈরি করান। ঈগল পরিবহন, আকিজ গ্রুপ, প্রাণ গ্রুপের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর বাস, ট্রাক, কাভার্ড ভ্যানের বডিও তৈরি হয় এখানে। পঞ্চাশের দশক থেকে যশোরে এই অটোমোবাইল শিল্প যাত্রা শুরু করলেও মূলত নব্বইয়ের দশকে এসে ব্যাপকভাবে বিস্তৃতি লাভ করে। একই সময় ভারত থেকে টাটা ও অশোক লেল্যান্ড গাড়ি আমদানি শুরু হয়। এসব গাড়ির বডি তৈরির বিশাল ক্ষেত্রও তৈরি হয় এ সময়। প্রথম দিকে আবদুল মান্নান নামে এক অটোমোবাইল শ্রমিক যশোরে এসব গাড়ির বডি তৈরির কাজ শুরু করেন। তার দেখাদেখি এ কাজ শুরু করেন জাহাঙ্গীর আলম, শাহিন কবির, সিরাজ বাবু, কামাল হোসেন, মনোরঞ্জনসহ আরও অনেকে। এখন যশোরের শহরতলি বকচর, মুড়োলী, রাজারহাট, পুলেরহাট, চাঁচড়াসহ ঝিকরগাছা ও কেশবপুর উপজেলায় ছোট-বড় তিন হাজারের মতো ওয়ার্কশপ রয়েছে। তবে যশোর জেলা অটোমোবাইল মালিক সমিতির সদস্যসংখ্যা এখন ৮০০। সমিতির সভাপতি আশরাফুল আলম বলেন, সমিতিভুক্ত ও সমিতির বাইরের ওয়ার্কশপগুলোতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অন্তত ৩৫ হাজার মানুষ এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত। এসব ওয়ার্কশপের দক্ষ ও অভিজ্ঞ কর্মীরা অল্প সময়ে বাস-ট্রাকের আন্তর্জাতিক মানের বডি তৈরি করে দিতে পারেন। দেশের অন্য স্থানের তুলনায় এখানে বডি নির্মাণ করলে বাস-ট্রাকপ্রতি দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা খরচ কম পড়ে। এ কারণে যশোর ও আশপাশের জেলা তো বটেই, ঢাকা, চট্টগ্রাম, বরিশালসহ বিভিন্ন জেলার মালিকরা তাদের গাড়ির বডি যশোর থেকে তৈরি করান। আশরাফুল আলম বলেন, যশোরের ওয়ার্কশপগুলোতে হিনো, অশোক লেল্যান্ড, টাটা, এইচার, মাজদা কোম্পানির বাস-ট্রাকের বডি বেশি নির্মাণ করা হয়ে থাকে। নির্মাণ করা হয় কাভার্ড ভ্যান ও পিকআপের বডিও। এ ছাড়া দুর্ঘটনার শিকার এবং নষ্ট হয়ে যাওয়া বিভিন্ন গাড়ির বডিও রিমডেলিং করা হয় এখানে। সমিতির সাধারণ সম্পাদক শাহিন কবির জানান, নতুন-পুরনো মিলিয়ে প্রতি মাসে যশোরে গড়ে সাড়ে চারশ বাস ও ট্রাকের বডি তৈরি হচ্ছে। সে অনুযায়ী বছরে এখানে তৈরি হচ্ছে সাড়ে ৫ হাজার বাস-ট্রাকের বডি। এর বাইরে কাভার্ড ভ্যান ও পিকআপের বডিও তৈরি হচ্ছে। সব মিলিয়ে এ খাতে বছরে লেনদেন হচ্ছে ৬০০ কোটি টাকারও বেশি।
অটোমোবাইল ওয়ার্কশপ সমিতির সাবেক কোষাধ্যক্ষ আবুল হোসেন বলেন, এখানকার কারিগরদের কোনো একাডেমিক শিক্ষা নেই। অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কিংবা মেকানিক্যাল কোনো প্রশিক্ষণই নেই। গাড়ির বডি নির্মাণের জন্য তারা আধুনিক কোনো যন্ত্রপাতিও পান না। কেবল ছেনি, হাতুড়ি, শান মেশিন, ড্রিল মেশিন, ওয়েল্ডিং মেশিন দিয়েই তারা তৈরি করছেন বাস-ট্রাকের বিশ্বমানের বডি। তিনি বলেন, যশোরে অটোমোবাইল শিল্প যতটুকু এগিয়েছে, তা কেবল এখানকার ওয়ার্কশপগুলোর মালিকদের পরিশ্রমের ফসল। সরকারি-বেসরকারি কোনো সুযোগ-সুবিধাই তারা পাননি। তিনি বলেন, ‘এ শিল্পকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য যশোরে আলাদা একটা শিল্পাঞ্চল করা জরুরি। এ ব্যাপারে বহু আগে থেকেই আমরা বিসিকের কাছে দাবি জানিয়ে আসছিলাম। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না।’ শাহিন কবির বলেন, ‘আমাদের প্রধান দাবি আলাদা একটি শিল্পাঞ্চল করার। ২০০৪ সালে যশোর বিসিকের মাধ্যমে সংস্থাটির প্রধান কার্যালয়ে এ ব্যাপারে একটি আবেদন করেছিলাম। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। পরে আরও এক দফা চেষ্টা করেছি। তাতেও কিছু হচ্ছে না। ব্যাংকে ঋণ চাইতে গেলেই মর্টগেজ চায়। কিন্তু প্রায় সব ওয়ার্কশপই ভাড়া করা জায়গায় কাজ করে। সে ক্ষেত্রে তারা ব্যাংকঋণ নিতে পারে না। এ শিল্পকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য সহজ শর্তের ব্যাংকঋণ খুবই প্রয়োজন। প্রয়োজন এখানকার শ্রমিকদের প্রশিক্ষণের। তিনি বলেন, ‘মালয়েশিয়া থেকে একটি মার্সিডিজ বেঞ্জের বডি আনতে দেড় কোটি টাকারও বেশি খরচ হয়। ওই বডি আমরা এখানে মাত্র এক কোটি টাকায় বানিয়ে দিতে পারি। বিদেশেও গাড়ির বডির অনেক চাহিদা রয়েছে। সরকার যদি আমাদের এ শিল্পের দিকে একটু নজর দেয়, আলাদা শিল্পাঞ্চল করে সহজ শর্তে ব্যাংকঋণের ব্যবস্থা করে দেয়, তাহলে অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়েও আমরা বাস-ট্রাকের বডি বিদেশে রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় করতে পারব।’
অটোমোবাইল ওয়ার্কশপ সমিতির সাবেক কোষাধ্যক্ষ আবুল হোসেন বলেন, এখানকার কারিগরদের কোনো একাডেমিক শিক্ষা নেই। অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কিংবা মেকানিক্যাল কোনো প্রশিক্ষণই নেই। গাড়ির বডি নির্মাণের জন্য তারা আধুনিক কোনো যন্ত্রপাতিও পান না। কেবল ছেনি, হাতুড়ি, শান মেশিন, ড্রিল মেশিন, ওয়েল্ডিং মেশিন দিয়েই তারা তৈরি করছেন বাস-ট্রাকের বিশ্বমানের বডি। তিনি বলেন, যশোরে অটোমোবাইল শিল্প যতটুকু এগিয়েছে, তা কেবল এখানকার ওয়ার্কশপগুলোর মালিকদের পরিশ্রমের ফসল। সরকারি-বেসরকারি কোনো সুযোগ-সুবিধাই তারা পাননি। তিনি বলেন, ‘এ শিল্পকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য যশোরে আলাদা একটা শিল্পাঞ্চল করা জরুরি। এ ব্যাপারে বহু আগে থেকেই আমরা বিসিকের কাছে দাবি জানিয়ে আসছিলাম। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না।’ শাহিন কবির বলেন, ‘আমাদের প্রধান দাবি আলাদা একটি শিল্পাঞ্চল করার। ২০০৪ সালে যশোর বিসিকের মাধ্যমে সংস্থাটির প্রধান কার্যালয়ে এ ব্যাপারে একটি আবেদন করেছিলাম। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। পরে আরও এক দফা চেষ্টা করেছি। তাতেও কিছু হচ্ছে না। ব্যাংকে ঋণ চাইতে গেলেই মর্টগেজ চায়। কিন্তু প্রায় সব ওয়ার্কশপই ভাড়া করা জায়গায় কাজ করে। সে ক্ষেত্রে তারা ব্যাংকঋণ নিতে পারে না। এ শিল্পকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য সহজ শর্তের ব্যাংকঋণ খুবই প্রয়োজন। প্রয়োজন এখানকার শ্রমিকদের প্রশিক্ষণের। তিনি বলেন, ‘মালয়েশিয়া থেকে একটি মার্সিডিজ বেঞ্জের বডি আনতে দেড় কোটি টাকারও বেশি খরচ হয়। ওই বডি আমরা এখানে মাত্র এক কোটি টাকায় বানিয়ে দিতে পারি। বিদেশেও গাড়ির বডির অনেক চাহিদা রয়েছে। সরকার যদি আমাদের এ শিল্পের দিকে একটু নজর দেয়, আলাদা শিল্পাঞ্চল করে সহজ শর্তে ব্যাংকঋণের ব্যবস্থা করে দেয়, তাহলে অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়েও আমরা বাস-ট্রাকের বডি বিদেশে রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় করতে পারব।’
0 coment rios: