যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে কিছু কর্মকর্তা কর্মচারী টাকার বিনিময়ে বহিরাগতদের চাকরি দিচ্ছে। ওয়ার্ড বয় ও পরিচ্ছন্ন কর্মী পদে এভাবে বহিরাগতদ...
সূত্রদের কেউ বলছেন চাকরি বিক্রি, কেউ বলছেন ওয়ার্ড বিক্রি। যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে এমন অনিয়ম চলছে প্রকাশ্যে। যারা এমন অনিয়ম করছেন তারা হাসপাতালের ‘প্রভাবশালী’ কর্মচারী, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গেলে ভাবতে হয় কর্মকর্তাদের।
টাকার বিনিময়ে বহিরাগতরা হাসপাতালে ওয়ার্ডবয়, আয়া ও সুইপার পদে কাজ করার সুযোগ পাচ্ছে। এসব বহিরাগতদের বিরুদ্ধে রয়েছে নারী কেলেঙ্কারীর অভিযোগ। আবার বিগত দিনে কেউ ছিলেন দালালি পেশার সাথে জড়িত। সূত্র জানায়, বিতর্কিত ব্যক্তিদের ওয়ার্ডে কাজ করার সুযোগ দিয়ে একটি মহল আর্থিকভাবে লাভবান হলেও সরকারি এ স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানের সুনাম নষ্ট হচ্ছে। কেননা তারা ওয়ার্ডে সৃষ্টি করছে নানা ধরণের বিশৃঙ্খলা। টাকা ছাড়া কোনো কাজই করতে চায় না তারা।
বহিরাগতদের মধ্যে পুরুষ মেডিসিন ওয়ার্ডে ওয়ার্ডবয় হিসেবে রয়েছে আহাদ আলী, সুইপার দেবাশীষ, মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ডে আয়া সুখজান, ওয়ার্ডবয় অভি, পুরুষ পেইং ওয়ার্ডে বাবু, মহিলা পেইংওয়ার্ডে সুইপার জাহিদ, ওয়ার্ডবয় রোকেয়া, অপারেশন থিয়েটারে কৃষ্ণ দেবের ভাই ছোট খোকন, লেবার ওয়ার্ডে আয়া সখিনা, আঞ্জুয়ারা, নুর জাহান, মহিলা সার্জারি ওয়ার্ডে ওয়ার্ডবয় ইতি, জরিনা, সুফিয়া ওরফে সুফি। এছাড়া জরুরি বিভাগসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে আরো কয়েকজন বহিরাগত নানা পদে কাজ করছে।
অভিযোগ উঠেছে, ২০ থেকে ৬০ হাজার টাকার বিনিময়ে হাসপাতালের কতিপয় কর্মকর্তা কর্মচারী অনাভিজ্ঞ এসব নারী পুরুষের বানিয়ে দিয়েছেন ওয়ার্ডবয় আয়া ও সুইপার। তাদের ওয়ার্ডবয় ও আয়ার কাজ সম্পর্কেও কোনো ধারণা নেই। তাদের কাজের বৈধতার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অজান্তে দেয়া হচ্ছে সরকারি হাসপাতালের জাল পরিচয়পত্র। এ পরিচয় পত্রকে পুঁজি করে বহিরাগতরা রোগী ও স্বজনদের কাছ থেকে নগদ অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন প্রতিনিয়ত। টাকা না দিলেই করা হয় দুর্ব্যবহার। এতে ওয়ার্ডে চিকিৎসাসেবায় বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়ে থাকে। সূত্রটি আরো জানায়, মাস শেষে বহিরাগতদের আয়ের একটি অংশ দিতে হয় ওই অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। যারা এখানে তাদের কাজ করায় সুযোগ করে দিয়েছেন। জানা গেছে, প্রতিমাসে টাকা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় নানা অজুহাতে ওয়ার্ড থেকে বের করে দেয়া হয়। এমনি একজন ভুক্তভোগী নাজমুল ইসলাম। তার কাছ থেকে সুবিধা না পেয়ে তাকে নিয়োগ দেয়া এক কর্মচারী তাকে ওয়ার্ড থেকে তাড়িয়ে দিয়েছেন। অভিযোগ রয়েছে, আহাদ আলী নামের এক যুবকের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নিয়ে নাজমুল ইসলামের স্থানে পুরুষ মেডিসিন ওয়ার্ডে তাকে কাজ করার সুযোগ করে দেয়া হয়েছে। এদিকে অনুসন্ধানে জানা গেছে, বহিরাগত কয়েকজন নারী পুরুষের বিরুদ্ধে অনৈতিকতার অভিযোগ রয়েছে। আবার কেউ কেউ বিগত দিনে ছিলেন দালালি পেশার সাথে জড়িত। পুরুষ মেডিসিন ওয়ার্ডের বহিরাগত কর্মচারী দেবাশীষ রাতে ওয়ার্ডে কাজ করার সময় সে এক ছাত্রী সেবিকার সাথে অনৈতিকতার সময় ধরা পড়ে। এ ঘটনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দেবাশীষকে হাসপাতাল থেকে তাড়িয়ে দেয়। সম্প্রতি ওই যুবক আবার ওয়ার্ডে কাজ করার সুযোগ পেয়েছে। এদিকে, আহাদ ও অভি নামের দুই যুবক বিগত দিনে ছিলো ক্লিনিক ও ফার্মেসির দালাল। বর্তমানে তারা সরকারি এ হাসপাতালের ওয়ার্ডবয় বনে গেছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকারি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানের ওয়ার্ড টাকার বিনিময়ে বিক্রি করে দেয়ায় বহিরাগতদের সংখ্যা বাড়ছে। হাসপাতালের হিসাব শাখার তথ্য মতে, বহিরাগত এসব কর্মচারীদের কোনো বেতন দেয়া হয় না। প্রশ্ন থাকতে পারে তাহলে বিনা বেতনের এ কাজ বহিরাগতরা মোটাঅংকের টাকায় নেয় কোনো। সূত্রের দাবি, এদের বেতন প্রয়োজন হয় না। ওয়ার্ডে ভর্তি রোগীর স্বজনদের জিম্মি করে প্রতিদিন হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়। টাকা ছাড়া ওয়ার্ডে কোনো কাজই করে না বহিরাগতরা। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বহিরাগতদের চাকরির বিষয়টি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অবগত থাকলেও অজ্ঞাত কারণে নীরব থাকেন। কেননা তাদের নিয়োগদাতা কর্মচারীরা প্রভাবশালী হওয়ায় কর্তৃপক্ষ না জানার ভান করেন। এ কর্মচারীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ওয়ার্ড মাস্টার ওবায়দুর রহমান কাজল ও জমাদ্দার সরদার ইমরান হোসেন টপি। ওবায়দুর রহমান কাজল বলেন, নগদ টাকার বিনিময়ে নয়, রাজনৈতিক নেতাসহ বিভিন্ন মহলের সুপারিশে বহিরাগতদের ওয়ার্ডে কাজ দেয়া হয়। সব মিলিয়ে এ ধরণের অনৈতিকতার কারণে হাসপাতালে সেবার মান হচ্ছে নিম্নমুখী। আবার সুনামও হারাচ্ছে। এ ব্যাপারে হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. শামসুল হাসান দোদুল জানিয়েছেন, টাকার বিনিময়ে বাহিরাগতদের কাছে চাকরি বিক্রির খবর শুনেছি। বিষয়টি নিয়ে গোপনে অনুসন্ধান করা হচ্ছে। সত্যতা নিশ্চিত হওয়ার পর জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
পরিচয়পত্র সম্পর্কে তিনি বলেন, কোন বহিরাগত কর্মচারীকে পরিচয় পত্র দেয়া হয় না। আগে কিছু দেয়া হত তাতে বেসরকারি শব্দ লেখা থাকতো। কোন পরিচয় পত্রে ওয়ার্ড বয়, আয়া, এমএলএসএস বা সুইপার লিখে উল্লেখ থাকে না।