নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে উন্মুখ যশোরের সাংস্কৃতিক অঙ্গণ। তাইতো বাঁশ, বেতের মিশ্রণে অনবদ্য শৈলীর আমন্ত্রণপত্র, কিংবা আবহমান গ্রাম বাংলার চিরাতয় দৃশ্যর দাওয়াতপত্র তৈরির কাজ সেরে ফেলেছে অনেক সংগঠন।
পিছিয়ে নেই যশোর প্রশাসনও। তারা একদিন আগে অর্থ্যাৎ গত রোববার সন্ধ্যায় বৈশাখ উদযাপনের প্রস্তুতি সভা করেছে। বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে মঙ্গলশোভাযাত্রা শেষে ডিসি বাংলোয় পান্তা ইলিশের আয়োজন করা হয়েছে।
বরাবরের মত এবারও বাংলা নতুন বছরকে বরণ করে নিতে জেলার শীর্ষ সাংস্কৃতিক সংগঠন উদীচী যশোর পুরোদমে ব্যস্ত সময় পার করছে। সংগঠনটির আয়োজনে যশোরে বর্ষবরণের চার দশক পূর্তিতে এবারে থাকছে নানা চমক। ইতিমধ্যে বাঁশ আর বেতের মিশ্রণে অনবদ্য শৈলির আমন্ত্রণপত্র তৈরি করা হয়েছে। ‘মুক্ত মনের আলোকে, আঁধার কাটুক পলকে’-এই স্লোগানকে প্রতিপাদ্য করে উদীচীর আয়োজনে প্রতিবারের মতো এবারও বর্ষবরণের অনুষ্ঠান শহরের পৌর উদ্যানের সবুজ চত্বরে অনুষ্ঠিত হবে।
উদীচীর আয়োজনে এবারের বর্ষবরণ অনুষ্ঠান ৪১ বছরে পদার্পণ করছে। ১৩৮১ বঙ্গাব্দ (১৯৭৪ সাল) প্রথমবারের মত যশোরের পৌর উদ্যানের ‘জোড়াসাকো’র উপর সীমিত পরিসরে বর্ষবরণ উৎসবের আয়োজন করে উদীচী যশোর। সময়ের পরিক্রমায় সেই স্বল্প পরিসরের আয়োজন যশোরের বৃহৎ ও সার্বজনীন এক উৎসবে পরিণত হয়েছে।

যশোরের অন্যতম সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘নৃত্যবিতান’ বাঙালি সংস্কৃতিজাত গ্রামীণ ঝুমুরনৃত্যের তালে তালে বরণ করবে বাংলা নতুন বছর। ঝুমুরনৃত্য যার আরেক নাম সাঁওতালিনৃত্য। উত্তরবঙ্গের দিনাজপুর, রংপুর অঞ্চলে জন্ম-এই বিশেষ নৃত্যের তালে তালে এবারের নতুন বছরকে বরণের প্রস্তুতি নিচ্ছে যশোর একটি বিশেষায়িত নৃত্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নৃত্যবিতান।
‘নৃত্য হোক সকল অপছায়ার বিরুদ্ধে স্বচ্ছতার প্রতীক’- এই স্লোগানে নৃত্যবিতান যশোর বর্ষবরণ উৎসবের আয়োজন করেছে শহরের মুন্সি মেহেরুল্লাহ ময়দানের (টাউন হল মাঠ) শতাব্দী বটমূলের রওশন আলী মঞ্চে। নতুন বছরের প্রথম অপরাহ্নে নৃত্যবিতানের বৈশাখী আয়োজন এই নির্ধারিত স্থানের বাইরে জেলা প্রশাসনের অনুমতি মিললে ট্রাকে ভ্রাম্যমাণ মঞ্চ নির্মাণ করে শহরের বিভিন্ন স্থানে সাংস্কৃতিক পরিবেশনের পরিকল্পনা রয়েছে সংগঠনটির।
পহেলা বৈশাখের প্রথম প্রহরে জেলা প্রশাসন আয়োজিত মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ শেষে সংগঠনটির নিজস্ব কার্যালয়ে মিষ্টি মুখের আয়োজন রাখা হয়েছে। এ দিন অপরাহ্নে টাউন হল ময়দানে আয়োজিত নৃত্যানুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে শুরু হবে নৃত্যবিতানের বর্ষবরণ উৎসব। সংগঠনের শিল্পীরা লোকসংগীতের তালে পরিবেশন করবেন মনোজ্ঞনৃত্য। এছাড়া বৈশাখের গান, রবীন্দ্র সংগীত, নজরুল গীতি, আদিবাসীদের গানের লহরীতে অনবদ্য নৃত্যের মুদ্রায় সাজানো হয়েছে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের ডালি। পরদিন ভারতের কোলকাতায় বাংলাদেশ হাই কমিশনের আয়োজনে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে যোগ দেবে সংগঠনটির একটি নৃত্যদল।
বর্ষবরণ অনুষ্ঠানকে সফল করতে প্রতিদিন বিকেলে নৃত্যবিতানের নিজস্ব কার্যালয়ে চলছে নৃত্যের মহড়া। প্রতিষ্ঠানের পরিচালক নৃত্যগুরু সঞ্জীব চক্রবর্তীসহ শিক্ষক সঞ্জয় বিশ্বাস, সুকুমার আইচ, হোসাইন তারেক ও মেহেদি হাসানের নিবিড় তত্ত্বাবধানে চলছে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের পূর্বপ্রস্তুতি।

এমনটি জানিয়েছেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক এইচ আর তুহিন। আর সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘শেকড়’ কারুকার্যের মাধ্যমে খেজুরের রস ও মিষ্টির হাড়ি সম্বলিত আকর্ষণীয় দাওয়াতপত্র তৈরি করেছে। তারা সকালে শোভাযাত্রা শেষে মূল অনুষ্ঠান করবে বিকেলে শহরের পৌরপার্কে। এজন্য তারা রাত অবধি প্রস্তুত নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন সংগঠনের পরিচালক রওশন আরা রাশু।
এদিকে, পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে শহরের অভিজাত মার্কেটগুলোতে কেনাকাটা শুরু হয়েছে। এইচএমএম রোডের মনোষা বস্ত্রালয়, মুজিব সড়কের রং ফ্যাশান হাউজ, জাগরণী চক্রের চরকা নামক প্রতিষ্ঠানে প্রতিদিনই বৈশাখী পোশাক কিনতে আসছেন বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষ।
0 coment rios: