বাংলাদেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার
ব্যাপারে শেখ হাসিনার সরকার আত্মবিশ্বাসী এবং জরুরি অবস্থা জারির বিষয়টি
এখনো সরকারের বিবেচনায় আসেনি বলে ভারত সরকারকে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছেন
বাংলাদেশে দেশটির হাইকমিশনার পঙ্কজ শরণ। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নিয়োজিত
ভারতীয় কূটনীতিকদের ষষ্ঠ বার্ষিক সম্মেলনে যোগ দিতে নয়াদিল্লিতে অবস্থানের
সময় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এ বিষয়ে একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন জমা দেন তিনি।
বিএনপি-জামায়াত জোটের অবরোধে গাড়িতে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ ও বোমাবাজিতে
‘ত্রাসের পরিবেশ’ সৃষ্টির বিষয়টি স্বীকার করেছেন পঙ্কজ। এক মাসেরও বেশি
সময়ের অবরোধে নাশকতায় এরই মধ্যে ৭০ জনের মতো মানুষের মৃত্যু হয়েছে, যাদের
অধিকাংশই পেট্রোল বোমার আগুনে পুড়ে মারা গেছেন। যেসব জেলায় বেশি সহিংস ঘটনা
ঘটেছে সেগুলো চিহ্নিত করেছেন ভারতীয় হাইকমিশনার। সেগুলোর মধ্যে ফেনী,
চট্টগ্রাম, যশোর, বরিশাল, রংপুর, মাগুরা ও ঢাকা রয়েছে। তবে শরণের
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দশম সংসদ নির্বাচনের আগে ২০১৩ সালে এর চেয়ে খারাপ
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছে হাসিনার সরকার। সহিংসতা দমনে বাংলাদেশ সরকার
কিছু কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে এবং তা কাজে দিচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। পরিস্থিতি
নিয়ন্ত্রণে আনতে অক্লান্ত পরিশ্রম করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং এরই মধ্যে
তারা বেশ সফলতাও পেয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন শরণ। এতে বলা হয়,
পেট্রোল বোমা মেরে অনেক নিরীহ মানুষকে হত্যায় সাধারণ জনগণ বিক্ষোভকারীদের
বিপক্ষে চলে গেছে এবং তা সহিংসতা দমনে জনসাধারণের সমর্থন পেতে আইনশৃঙ্খলা
বাহিনীকে সহায়তা করছে।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা
ব্যানার্জির আসন্ন সফর সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠানের ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকার
আত্মবিশ্বাসী। সফরটি সফল করতে সম্ভাব্য সব কিছু করছে সরকার। তার নিরাপত্তা
নিয়ে দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই। এটা তারা দেখবে, শরণের প্রতিবেদনকে উদ্ধৃত
করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক জ্যেষ্ঠ কর্মতকর্তা এ কথা জানান।
এদিকে, আগামী মার্চেই ঢাকায় হাইকমিশনারের দায়িত্বের মেয়াদ পূর্ণ হচ্ছে
শরণের। এরপর তার জায়গায় কে আসছেন সে বিষয়টি এখনো ঠিক হয়নি। নতুন পররাষ্ট্র
সচিব সুব্রামানিয়াম জয়শঙ্কর বেশ কয়েকটি দেশের নতুন রাষ্ট্রদূত ও কনসাল
জেনারেলদের নিয়োগ চূড়ান্ত করছেন, বাংলাদেশও সেগুলোর মধ্যে রয়েছে। পররাষ্ট্র
মন্ত্রণালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তার ভাষ্য অনুযায়ী পঙ্কজ শরণ ঢাকায় দায়িত্ব
পালনকালে দুই দেশের সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় পৌঁছানোয় তার এ মেয়াদকে সফল
হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে, যার ফল হিসেবে ‘আরো গুরুত্বপূর্ণ পদ’ পেতে
চলেছেন তিনি।
তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি ও স্থল সীমান্ত চুক্তি
বাস্তবায়নের যে প্রতিশ্রুতি ভারত হাসিনা সরকারকে দিয়েছে তা পূরণের লক্ষ্যে
শরণ এখন তার দেশের সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছেন বলে বলা হচ্ছে। এই
দুই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের জন্য তিনি মোদী সরকারকে রাজি করাতে পেরেছেন
বলে ধারণা করা হয়। আর ওই প্রতিশ্রুতি পূরণের জন্যই মমতা ব্যানার্জির সফরকে
গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। মমতা দুটি চুক্তিরই বিরোধিতা করলেও
স্থল সীমান্ত চুক্তির ব্যাপারে এখন মন বদলেছেন।
0 coment rios: