
এ সময় সরকারের পক্ষ থেকে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু। তিনি জানান, ‘আমরা খোলামেলা আলোচনা করেছি, এটি সুনির্দিষ্ট কোনো নির্দেশনা নয়, কোনো নির্দেশও নয়, এখানে যে যার মতামত দিয়েছে, আলোচনার ভিত্তিতে আমরা ঐক্যমত হয়েছি যে, তারা সত্যটা তুলে ধরবেন।’
অঞ্জন চৌধুরী বলেন, ‘তথ্য মন্ত্রণালয়ের আমন্ত্রণে আমরা এখানে উপস্থিত হয়েছি। আলোচনার বিষয়বস্তু ছিল বর্তমান প্রেক্ষাপটে ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার কি দায়িত্ব এবং দেশে যে ঘটনাগুলো ঘটছে এতে আমদের কি ভূমিকা, সে ভূমিকা আমরা কিভাবে পালন করছি।’
টিভি চ্যানেল এ নাশকতাকে উৎসহিত করলে দেশে ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আলোচনায় সত্য বিষয়টি তুলে ধরার জন্য মন্ত্রীরা আমাদের যথেষ্টভাবে উৎসাহিত করছেন। সবচেয়ে বড় প্রশ্ন এসেছে, এটা আন্দোলন না নাশকতা? আমরা এ বিষয়ে একমত হয়েছি, আন্দোলন কার্যক্রম এক রকম, নাশকতার কার্যক্রম আরেক রকম। চলমান পরিস্থিতিতে যা দেখতে পাচ্ছি, তা হলো নাশকতা। সে বিষয়ে আমরা নিজেরাও (টিভি মালিক) একমত হয়েছি। আমরা মিডিয়া ব্যক্তি হিসেবে না, দেশের নাগরিক হিসেবে একমত হয়েছি। এ নাশকতা আমাদের দেশের জন্য ক্ষতিকর। আমরা সেটা (নাশকতা) সম্প্রচার করবো না। যদি এ বিষয়গুলোকে উৎসাহিত করি, তাহলে দেশে এক পর্যায়ে ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে।’
অঞ্জন চৌধুরী বলেন, এ ছাড়া আরো একটি বিষয়ে আলোচনা হয়েছে, আমাদের ক্যাবল অপারেটররা ভারতের টিভি চ্যানেলগুলোকে যেভাবে প্রধান্য দিচ্ছে। শিল্প, বাণিজ্য, তথ্যমন্ত্রী এ বিষয়ে একমত হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তাদের অবশই করনীয় রয়েছে। অতি দ্রুত এ বিষয়ে একটা আন্তমন্ত্রণালয় সভা করবে, যাতে অর্থমন্ত্রীও থাকবেন।
দেশের ব্যবসা, বাণিজ্য, রপ্তানিসহ বর্তমান সবধরনের অবস্থা স্বাভাবিক দাবি করে সরকারের পক্ষে শিল্পমন্ত্রী বলেন, ‘দেশের বর্তমান অবস্থা প্রকৃত অর্থে স্বাভাবিক। তা সাধারণ মানুষ জানতে পারছে না। দেশের ব্যবসা, বাণিজ্য, রপ্তানি সবকিছুই স্বাভাবিকভাবে চলছে। এ বিষয়গুলো মানুষ অবহিত নয়। এ সত্য তুলে ধরার পাশাপাশি হাইওয়েতে প্রতিদিন যে ৫০-৬০ হাজার গাড়ি চলাচল করছে- তা মানুষকে অবহিত করার জন্য মিডিয়া মালিকদের অনুরোধ করেছি, তারা আমাদের সঙ্গে একমত হয়েছেন।’
দেশের পরিস্থিতি ‘স্বাভাবিক’ দাবি করে এ বিষয়টি তুলে ধরতে বৈঠকে টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর সহযোগিতা চাওয়া হয় সরকারের তরফ থেকে।
অন্যদিকে টেলিভিশন চ্যানেলের প্রতিনিধিরা বৈঠক শেষে জানান, সহিংসতা ও রাজনীতির ঘটনাগুলো ‘একসঙ্গে না মিলিয়ে’ নাশকতার ‘সঠিক চিত্র’ তুলে ধরতে সরকারের আহ্বানে তারা ‘একমত হয়েছেন’।
তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু ছাড়াও শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, পানিসম্পদ মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল এই ‘মতবিনিময়ে’ অংশ নেন।
সভা শেষে আমির হোসেন আমু সাংবাদিকদের বলেন, “দেশে আন্দোলনের নামে নাশকতা ও সন্ত্রাস চলছে। তবে অনেক কিছু মানুষ জানতে পারছে না। দেশের প্রকৃত অবস্থা স্বাভাবিক। ব্যবসা, বাণিজ্য, রপ্তানি- প্রতিটি বিষয়ে স্বাভাবিক অবস্থা চলছে, এগুলো মানুষ অবহিত নয়।”
তিনি বলেন, এসব বিষয় তুলে ধরার পাশাপাশি প্রতিদিন ঢাকা থেকে মহাসড়কে যে ৫০ থেকে ৬০ হাজার গাড়ি যাওয়া-আসা করছে, সে বিষয়টিও টেলিভিশনে আসতে হবে।
“দুই-একটি বাস পোড়ানো বা ট্রাক পোড়ানো এমনভাবে মানুষের সামনে দৃষ্টিগোচর হয়েছে যাতে তারা মনে করে সারাদেশে স্বাভাবিক পরিস্থিতি বিরাজ করছে না। এ বিষয়গুলোর সঠিক তথ্যটা যাতে উপস্থাপিত হয়”, বলেন শিল্পমন্ত্রী।
গণমাধ্যমকর্মীদের সামনে আমির হোসেন আমু বলেন, “মিডিয়াকে জানাতে চাই, তারা (টেলিভিশনের প্রতিনিধি) অনেককিছু ওয়াকিবহাল ছিলেন না। তাদের কাছে আমরা অনেক কিছু প্রমাণ সহকারে উপস্থাপন করেছি। তারাও কনভিন্সড এবং তারা বলছেন আন্দোলন ও রাজনীতি এগুলো নয়, এটা সন্ত্রাস ও নাশকতা। সন্ত্রাস ও নাশকতা মানুষকে গাইড করতে পারে না। এগুলো নিরাপত্তাহীনতা সৃষ্টি করা হচ্ছে।”
তিনি বলেন, “দেশের মানুষের কাছে তারা সঠিক তথ্য উপস্থাপন করবেন বলে আমরা একমত হয়েছি।”
টেলিভিশনগুলোকে এ বিষয়ে কোনো ধরনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে কি না- জানতে চাইলে শিল্পমন্ত্রী বলেন, “এখানে মতবিনিময় করা হয়েছে। কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। আলোচনার ভিত্তিতে ঐকমত্য হয়েছে।”
মাছরাঙ্গা টেলিভিশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অঞ্জন চৌধুরী বলেন, “নাশকতাকে আমরা যেন সেনসেশনালাইজড না করি, এ ব্যাপরে কিছু মন্তব্যে আমরা একমত হয়েছি। আমাদের দেশের জন্য যা ক্ষতিকর- অবশ্যই তা আমরা করব না।”
বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, “এখানে সত্যটা তুলে ধরা হবে। বাংলাদেশে কিছু কিছু নাশকতা ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপ ছাড়া স্বাভাবিক অবস্থা বিরাজ করছে। এটা মিডিয়ার মাধ্যমে তুলে ধরা হবে, যেমন- ঢাকা শহরে ট্রাফিক জ্যাম রয়েছে সে কথাও তুলে ধরা হবে।”
একাত্তর টেলিভিশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোজাম্মেল বাবু বলেন, “নাশকতা দমনে সরকার ও রাষ্ট্রের পাশে থেকে আমরা সর্বোচ্চ ভূমিকা পালন করব। এটি নাশকতা, নাশকতার বিরুদ্ধে দেশ-জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার ব্যাপারে আমরা একসাথে কাজ করব।”
তথ্যমন্ত্রী বলেন, “চলমান সন্ত্রাস-নাশকতা, অন্তর্ঘাত মোকাবেলায় বৈঠকে ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সহযোগিতা কামনা করা হয়েছে।”
বৈশাখী টিভির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল বলেন, “নিয়মিত ব্রিফিং, সহিংসতা ও রাজনীতি যেন মিলিয়ে না ফেলি- এ বিষয়ে একমত হয়েছি। সহিংসতা হলো সহিংসতা, আর রাজনীতি মানে রাজনীতি। রাজনীতির জায়গা যদি সহিংসতা দখল করে নেয় তাহলে রাজনীতি বিপদজনক জায়গায় পড়বে। আমরা বলেছি আমরা সুস্থ রাজনৈতিক ধারার পক্ষে এবং আমরা সহিংসতার বিরুদ্ধে।”
বৈঠকের সূচনা বক্তব্যে তথ্য সচিব মরতুজা আহমেদ বলেন, টেলিভিশনের ভুল সংবাদ মানুষের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
“গতকালের সংবাদ ২৪ ঘণ্টা পর আপডেট করে তাজা খবর হিসাবে প্রচার করা হচ্ছে। বাসি খবরকে এভাবে তাজা বানালে মানুষের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।”
দেশের অধিকাংশ টেলিভিশন চ্যানেলের প্রতিনিধিরা এ মত বিনিময়ে উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে সরকারের পক্ষ থেকে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ ও পানিসম্পদমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, স্বরাষ্ট্র পতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সংসদ সদস্য ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) কার্যকরী সভাপতি মাঈনুদ্দিন খান বাদল উপস্থিত ছিলেন।
টিভি চ্যানেলের পক্ষে ছিলেন মাছরাঙ্গা টিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক অঞ্জন চৌধুরী, বৈশাখী টিভির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল, চ্যানেল একাত্তর এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোজাম্মেল বাবুসহ আরো অনেক।
0 coment rios: