যশোরের প্রাণকেন্দ্র থেকে একটি পতিতালয় উচ্ছেদ এবং এ নিয়ে ঘটনাপ্রবাহ গোটা শহর জুড়ে এখন আলোচনার বিষয়। দু’সপ্তাহ আগে রাতের আঁধারে শহরের বড়বাজা...
যশোরের প্রাণকেন্দ্র থেকে একটি পতিতালয় উচ্ছেদ এবং এ নিয়ে ঘটনাপ্রবাহ গোটা শহর জুড়ে এখন আলোচনার বিষয়। দু’সপ্তাহ আগে রাতের আঁধারে শহরের বড়বাজারের হাটখোলা রোড সংলগ্ন বাবুবাজার পতিতা পল্লীতে উচ্ছেদ করে দেয়া হয়। পানির সংযোগ কর্তন ও হুমকি ধামকি দিয়ে তাদের উচ্ছেদ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন পতিতারা। উচ্ছেদের পর থেকে তারা মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
তিন যুগেরও বেশি সময় ধরে যশোর শহরের লোহাপট্টিতে অবস্থান করছিলো সমাজের মূলস্রোত থেকে ছিটকে পড়া কিছু নারী। শহরের নাজির শংকরপুর এলাকার বিল্লাল হোসেনের এক টুকরা জমির উপর নির্মিত অন্ধকার ও স্যাতস্যাতে খুপড়ি ঘরের মধ্যে জীবনযাপন ছিলো তাদের। আর খদ্দেরকে সন্তষ্ট করে জীবিকা নির্বাহ করতো তারা। কিন্তু মাত্র তিনদিনের নোটিশে তাদের ঘরহীন করা হয়েছে।
সূত্র জানিয়েছে, জমির মালিক বিল্লাল হোসেন বিদেশে পাঠানোর নামে বিভিন্ন লোকজনের কাছ থেকে টাকা গ্রহণ করলেও তাদের বিদেশে পাঠাতে পারেনি। ভুক্তভোগীরা টাকা ফেরত পাবার জন্য চাপ দিলে বিল্ল¬াল হোসেন পতিতালয়ের জায়গা বিক্রির সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু পতিতাদের উচ্ছেদ ছাড়া এ কাজটি সম্ভব হচ্ছিল না। এজন্য সে পানি ও বিদ্যুৎ সংযোগ বিছিন্ন ও পুলিশ দিয়ে পতিাতদের ঘর ছাড়া করতে বাধ্য করে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন পতিতা অভিযোগ করেছেন, এ পতিতালয়ে মোট ৭০জন মেয়ে ছিলো। এর মধ্যে ৩৮ জনের লাইসেন্স ছিলো। বিল্লাল হোসেন তাদের চলে যাবার জন্য প্রথমে তিন মাস সময় দেবার কথা বলেন। এজন্য স্ট্যাম্পে চুক্তিও করেন। এ সময়ের মধ্যে তারা কোন অবলম্বন হবে আশায় পতিতারাও প্রস্তাবে রাজি হন। কিন্তু মাত্র তিন দিনের মাথায় বিদ্যুৎ, পানি সংযোগ বিচ্ছিন্ন ও হুমকি ধামকি দিয়ে তাদের রাস্তায় বের করে দেয়া হয়। বিষয়টি কাউকে না জানাতে অব্যাহতভাবে হুমকি দেয়া হয়। যে কারণে তারা গোপনে চলে যান। তাদের কয়েকজন যশোরের অন্য দুটি পতিতালয়ে অবস্থান নিয়েছে। অনেকে জায়গা না পেয়ে শহরের বিভিন্নস্থানে যোগ দিয়েছেন। কাজ না থাকায় এখন তারা চরম মানবেতর জীবনযাপন করছেন বলে জানায়।
সূত্র আরো জানায়, তাদের উচ্ছেদ করতে সদর ফাঁড়ির পুলিশসহ বেশ কিছু লোককে মোটা অংকের টাকা দেয়া হয়েছে।
অভিযোগ পাওয়া গেছে, যশোরের লোহাপট্টি থেকে পতিতা পল্লী উচ্ছেদের ঘটনায় অবৈধ লেনদেন হয়েছে ৭৫ লাখ টাকা। এ টাকা দিয়ে পতিতাদের পুনর্বাসনের কথা থাকলেও পুরো টাকাটা হাপিস করে দিয়েছেন সদর পুলিশ ফাঁড়ি ইনচার্জ। বিষয়টি ম্যানেজ করতে তিনি বিভিন্ন পেশার কয়েকজনকে ওই টাকার হিস্যাও দিয়েছেন।
সূত্র জানিয়েছে, লোহাপট্টির বাবু বাজার পতিতা পল্লীর ৭০ মেয়েকে সরিয়ে জমি বিক্রির জন্য নানা প্রক্রিয়ার পর তাদের পুনর্বসান করা হবে বলে প্রলোভিত করা হয়। এজন্য ৭৫ লাখ টাকা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়। যে কারণে তিনমাসের মধ্যে মেয়েরা অন্যত্র চলে যেতে রাজি হয়। কিন্তু জমির মালিক ওই টাকা তুলে দেন সদর ফাঁড়ির ইনচার্জের হাতে।। তিনি টাকা নিয়ে তা পুনর্বাসনের জন্য ব্যবহার না করে পতিতাপল্লীর মেয়েদের ঘর নেয়া বাবদ দেয়া যতসামান্য জামানতের টাকা ফেরত দেন। এরপর পানি, বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন ও হুমকি ধামকি দিয়ে রাতের আধারে ঘরে ছাড়তে বাধ্য করেন। বিষয়টি নিয়ে যাতে হই চৈ না হয় সেজন্য পতিতা সর্দারনি ও বিভিন্ন পেশার কিছু লোককে মোটা অংকের টাকা দেয়া হয়।
সূত্র আরো জানিয়েছে, উচ্ছেদের পর থানার পিছনের পতিতা পল্লীর এক নম্বর গলিতে একজন, তিন নম্বর গলিতে চারজন ও ঝালাইপট্টি বাবুবাজার ২ নম্বর পতিতালয়ে ১৪/১৫জন মেয়ে জায়গা করে নিয়েছে। কিন্তু এখানে উঠে কাজ করার জন্য তাদের কাছে ২৫ হাজার টাকা করে দাবি করে সদর ফাঁড়ির ইনচার্জ। কিন্তু সর্দরানিদের চাপের কারণে শেষ পর্যন্ত নিতে পারেনি।
একজন পতিতা নেত্রী বলেন, টাকা চাওয়ার পর সোজা সাপ্টা বলে দেন তারা অবৈধভাবে উচ্ছেদ হয়েছে তাই কোন টাকা দিতে পারবে না। তিনি আরো জনান, বাকী ৫০টি মেয়ের হাতে গোনা কয়েকজন যশোর ছেড়ে চলে গেছে। কিন্তু বাকীরা শহর ও শহরের আশপাশে অবস্থান করছেন। এরা এখন ভ্রাম্যমান ও বাসা বাড়িতে পতিাতবৃত্তি করতে বাধ্য হবে। তার মতে পতিতা পল্লী উচ্ছেদ করে গণ্ডির ভিতরে থাকা মেয়েদের বাইরে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এর প্রভাব সমাজে পড়তে বাধ্য।
এদিকে রাতারাতি পতিতা পল্লী উচ্ছেদের ঘটনা প্রকাশ হয়ে পড়ায় তেলে বেগুনে জ্বলে ওঠেন উচ্ছেদ প্রক্রিয়ার সাথে জড়িতরা। তারা বিষয়টি ভিন্নভাবে উপস্থাপনের চেষ্টা শুরু করেছেন। এছাড়া তারা উচ্ছেদ হওয়ার পর যশোরের অন্য পতিতালয়ে আশ্রিতদের এ বিষয়ে মুখ বন্ধ রাখতে হুমকিধামকি অব্যাহত রেখেছেন।
এ বিষয়ে ফাঁড়ি ইনচার্জ রফিকুল ইসলামের কাছে ফোন করলে তিনি প্রথমে উত্তেজিত হয়ে ওঠেন। সাথে বলেন, উচ্ছেদ হওয়া পতিতাপল্লীটি তার আওতাধীন নয়।
রেডিও লালন শাহ